প্রতিবেশীর অধিকার ও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার | জুমুয়ার খুতবা
প্রতিবেশীর অধিকার ও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার |
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ বসবাস করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। প্রত্যেকেই একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। তাইতো বলা হয়ে থাকে, "সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।" আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন বিভিন্ন রকম যোগ্যতা দিয়ে। প্রত্যেকের কাছে প্রত্যেকেই কম-বেশি প্রয়োজনের জন্য যেতে হয়।
মহান রাব্বুল আলামিন মানুষকে বিভিন্ন দায়িত্ব
দিয়ে পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্যের বিষয়ে বর্ণনা করেছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা
বলেন,
وَاعۡبُدُوا اللّٰہَ وَلَا تُشۡرِکُوۡا بِہٖ شَیۡئًا وَّبِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا وَّبِذِی الۡقُرۡبٰی وَالۡیَتٰمٰی وَالۡمَسٰکِیۡنِ وَالۡجَارِ ذِی الۡقُرۡبٰی وَالۡجَارِ الۡجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالۡجَنۡۢبِ وَابۡنِ السَّبِیۡلِ ۙ وَمَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یُحِبُّ مَنۡ کَانَ مُخۡتَالًا فَخُوۡرَا ۙ
আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও
সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির
এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে। (সূরা আন নিসা ৪:৩৬)
প্রতিবেশী কারা
প্রতিবেশী কারা এই বিষয়ে প্রিয়নবী রাসূল
(সাঃ) একটি হাদিস উল্লেখ করা যেতে পারে।
حَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ حُرَيْثٍ قَالَ:
حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ مُوسَى، عَنِ الْوَلِيدِ بْنِ دِينَارٍ، عَنِ الْحَسَنِ، أَنَّهُ سُئِلَ عَنِ الْجَارِ، فَقَالَ:
أَرْبَعِينَ دَارًا أَمَامَهُ، وَأَرْبَعِينَ خَلْفَهُ، وَأَرْبَعِينَ عَنْ يَمِينِهِ، وَأَرْبَعِينَ عَنْ يَسَارِهِ
হাসান (র) থেকে বর্ণিতঃ তাকে প্রতিবেশী
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, নিজের ঘর থেকে সামনের চল্লিশ ঘর, পেছনের চল্লিশ ঘর, ডানের চল্লিশ ঘর
এবং বামের চল্লিশ ঘর তোমাদের প্রতিবেশী।
আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ১০৮
প্রতিবেশীর
প্রকারভেদ
ক) মুসলমান আত্মীয় প্রতিবেশী
খ) মুসলমান প্রতিবেশী
গ) অমুসলিম প্রতিবেশী
ক) মুসলমান আত্মীয় প্রতিবেশী
এ শ্রেণীর প্রতিবেশীদের হক তিন দিক থেকে।
প্রথমটা হল সে একজন মুসলমান, দ্বিতীয় হলো
একজন প্রতিবেশী এবং তৃতীয় হলো একজন আত্মীয়। তাই তার হক আদায় করার সময় খেয়াল
রাখতে হবে যে, সে তার অধিকার পাওয়ার দিক থেকে
তিন ধরনের অধিকার প্রাপ্য।
খ) মুসলমান প্রতিবেশী
এ শ্রেণীর প্রতিবেশীর হক দুই দিক থেকে। প্রথমত
সে একজন মুসলমান এবং দ্বিতীয়তো সে একজন প্রতিবেশী। তাই তার অধিকার আদায় করার
সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সে দুই ধরনের
অধিকার প্রাপ্য।
গ) অমুসলিম প্রতিবেশী
এ শ্রেণীর প্রতিবেশীর একটি অধিকার আছে। সে
ব্যক্তি প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করে তাই তার দেখাশোনা, ভালো মন্দ কাজে তাকে সে হিসেবে সহযোগিতা করতে হবে। অর্থাৎ
সমাজে বসবাস করে তাই সামাজিক সকল অধিকার সে প্রাপ্য।
প্রতিবেশীর
প্রতি সদাচরণ এর গুরুত্ব
প্রতিবেশী যেমনই হোক তার অধিকার রক্ষা করতে
হবে। তার প্রতি সদাচরণ করার বিষয়ে রাসূল করীম (সাঃ) বলেন,
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي بَكْرٍ، هُوَ ابْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ - عَنْ عَمْرَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিবেশীর অধিকারের ব্যাপারে জিবরাঈল (আঃ) আমাকে অবিরত উপদেশ
দিতে থাকেন। এতে আমার ধারণা হল যে, হয়ত শীঘ্রই তাকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবে।
(বুখারী, মুসলিম। জামেআত-তিরমিজি,
হাদিস নং ১৯৪২)
অন্য হাদিসে প্রিয় নবি (সাঃ) বলেন,
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ
: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم خَيْرُ الأَصْحَابِ عِنْدَ اللهِ تَعَالَى خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ وَخَيرُ الجِيرَانِ عِنْدَ الله تَعَالَى خَيْرُهُمْ لِجَارِهِرواه الترمذي وَقالَ حديث حسن
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উত্তম। আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী সর্বোত্তম, যে তার প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে সর্বাধিক উত্তম।”
(আহমাদ ৬৫৬৬, তিরমিযী ১৯৪৪, ইবনে খুযাইমা, ইবনে হিব্বান, হাকেম,
সিঃ সহীহাহ ১০৩ নং) হাদিস সম্ভার, হাদিস নং
১৭৭৭
প্রতিবেশীর
অধিকার
ক) ভালো ব্যবহার
প্রতিবেশীর অধিকার সমূহের মধ্যে অন্যতম হলো
তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। প্রিয়নবী (সাঃ) বলেছেন,
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، سَمِعَ نَافِعَ بْنَ جُبَيْرٍ، يُخْبِرُ عَنْ أَبِي شُرَيْحٍ الْخُزَاعِيِّ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ
" مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُحْسِنْ إِلَى جَارِهِ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَسْكُتْ " .
আবূ শুরায়হ আল-খুযাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে সদাচরন করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ
ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সমাদর করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও
শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম
কথা বলে,
অন্যথায় নীরব থাকে।
ফুটনোটঃ [৩০০৪] মাজাহ ৩২৭৫, সহীহুল বুখারী ৬০১৯, ৬১৩৫, ৬৪৭৬,
মুসলিম ৪৮, তিরমিযী ১৯৬৭, ১৯৬৮, আবূ দাউদ ৩৭৪৮, আহমাদ
১৫৯৩৫, ২৬৬১৮, ২৬৬২০, মুওয়াত্তা মালিক ১৭২৮, দারিমী ২০৩৫, ২০৩৬। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৭২
খ) দুর্ব্যবহার না করা
প্রতিবেশী মনে কষ্ট পায় এমন ব্যবহার করা যাবে
না। হাদীসে বর্ণিত আছে,
إِسْحَاقُ بْنُ نَصْرٍ حَدَّثَنَا حُسَيْنٌ الْجُعْفِيُّ عَنْ زَائِدَةَ عَنْ مَيْسَرَةَ عَنْ أَبِي حَازِمٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلاَ يُؤْذِي جَارَه
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেন, যে আল্লাহ্ এবং আখিরাতের ওপর
বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫১৮৫, আধুনিক
প্রকাশনী- ৪৮০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮০৭)
গ) ক্ষুধার্তকে অন্নদান
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ قَالَ:
أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبِي بَشِيرٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْمُسَاوِرِ قَالَ:
سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يُخْبِرُ ابْنَ الزُّبَيْرِ يَقُولُ:
سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ:
«لَيْسَ الْمُؤْمِنُ الَّذِي يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِعٌ»
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ ইবনে আব্বাস
(রাঃ) ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-কে অবহিত করে বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে তৃপ্তি
সহকারে আহার করে সে মুমিন নয় (বাযযার, হাকিম, তাহাবী)। আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ১১১
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، وَعَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ خَالِدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَعْفَرٍ، قَالَ لَمَّا جَاءَ نَعْىُ جَعْفَرٍ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " اصْنَعُوا لأَهْلِ جَعْفَرٍ طَعَامًا فَإِنَّهُ قَدْ جَاءَهُمْ مَا يَشْغَلُهُمْ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ . وَقَدْ كَانَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ يَسْتَحِبُّ أَنْ يُوَجَّهَ إِلَى أَهْلِ الْمَيِّتِ شَيْءٌ لِشُغْلِهِمْ بِالْمُصِيبَةِ . وَهُوَ قَوْلُ الشَّافِعِيِّ . قَالَ أَبُو عِيسَى وَجَعْفَرُ بْنُ خَالِدٍ هُوَ ابْنُ سَارَةَ وَهُوَ ثِقَةٌ رَوَى عَنْهُ ابْنُ جُرَيْجٍ .
আবদুল্লাহ্ ইবনু জাফর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি
বলেন,
জাফর (রাঃ)-এর শহীদ হওয়ার খবর এলে রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা জাফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরী কর। কেননা, এমন খবর তাদের নিকটে এসেছে যা তাদেরকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে।
(হাসান, ইবনু মা-জাহ (১৬১০), মিশকাত (১৭৩৯)
ফুটনোটঃ এই হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ্
বলেছেন। মৃত ব্যক্তির পরিবারের দুঃখ-কষ্ট জনিত ব্যস্ততার কারণে তাদেরকে কিছু
পাঠানোকে একদল আলিম মুস্তাহাব বলেছেন। এই অভিমত ইমাম শাফিঈর। জাফর ইবনু খালিদ
হচ্ছেন ইবনু সা-রাহ, তিনি একজন
নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। ইবনু জুরাইজও তার বরাতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৯৯৮
ঘ) বিপদে সমবেদনা জানানো
প্রতিবেশী বিপদগ্রস্ত হলে তাকে সাহায্য
সহযোগিতা করা, সমবেদনা, সান্ত্বনা জানানো এবং সৎ পরামর্শ দেয়া প্রত্যেক ব্যক্তির
জন্য অপরিহার্য। রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
وَعَنْ عَبْدِ اللّهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ:
من عَزّى مُصَابًا فَلَه مِثْلُ أَجْرِه
. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ:
هذَا حَدِيْثٌ غَرِيْبٌ لَا نَعْرِفُه مَرْفُوعًا إِلَّا مِنْ حَدِيثِ عَلِيِّ بْنِ عَاصِمٍ الرَّاوِي وَقَالَ:
وَرَوَاهُ بَعْضُهُمْ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سَوْقَةَ بِهذَا الْإِسْنَادِ مَوْقُوْفًا
আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে
ব্যক্তি কোন বিপদাপন্নকে সান্ত্বনা দেবে, তাকেও বিপদগ্রস্তের সমান সাওয়াব দেয়া হবে।
(তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি গরীব। আমি এ হাদীসটিকে
‘আলী ইবনু ‘আসিম ছাড়া আর কোন ব্যক্তি
হতে মারফূ‘ হিসেবে পাইনি। ইমাম তিরমিযী এ কথাও বলেন যে,
কোন কোন মুহাদ্দিস এ বর্ণনাটিকে মুহাম্মাদ ইবনু সূকা হতে এ সানাদে ‘মাওকূফ’ হিসেবে উদ্ধৃত করেছেন।)
গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) অধ্যায়ঃ
জানাযা (كتاب الجنائز) হাদিস নম্বরঃ ১৭৩৭
ঙ) প্রতিবেশীর দেয়া কষ্টে ধৈর্যের পরিচয় দেয়া
প্রতিবেশীর দেয়া কষ্টে ধৈর্যহারা না হয়ে তাকে
বুঝিয়ে বলা এবং তাকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা। রাসূল (সাঃ) বলেন,
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ
" لاَ يَمْنَعْ أَحَدُكُمْ جَارَهُ أَنْ يَغْرِزَ خَشَبَةً فِي جِدَارِهِ " . قَالَ ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيْرَةَ مَا لِي أَرَاكُمْ عَنْهَا مُعْرِضِينَ وَاللَّهِ لأَرْمِيَنَّ بِهَا بَيْنَ أَكْتَافِكُمْ .
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার প্রাচীরের গায়ে কাঠ স্থাপন করতে যেন আপন
প্রতিবেশীকে বারণ না করে।
এরপর আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) বলেন, কী ব্যাপার! আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে অমনোযোগী দেখতে
পাচ্ছি। আল্লহর কসম! আমি অবশ্যই তা দিয়ে তোমাদের ঘাড়ে ছুঁড়ে মারবো। (ই. ফা. ৩৯৮৫, ই. সে. ৩৯৮৪) সহিহ মুসলিম,
হাদিস নং ৪০২২
প্রতিবেশীর
প্রতি অসদাচরণ এর পরিণাম
ক) প্রতিবেশীর প্রতি অসদাচরণ কারী মুমিন নয়
প্রতিবেশীর সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না, যদিও সে অন্য ধর্মাবলম্বী হোক। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে
প্রতিবেশীর প্রতি অসদাচরণ অত্যন্ত গর্হিত কাজ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه
: أَنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ:
«وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ!»
قِيلَ : مَنْ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ:
«الَّذِي لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ!».
مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية لمسلم:
لا يَدْخُلُ الجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়।’’ জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন্ ব্যক্তি? হে আল্লাহর
রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
ফুটনোটঃ সহীহুল বুখারী ৬০১৬, আহমাদ ১৫৯৩৫, ২৬৬২০, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৩১০
খ) জান্নাতে প্রবেশের অন্তরায়
প্রতিবেশির প্রতি অসদাচরণকারী ব্যক্তি
জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। রাসূল (সাঃ) বলেন,
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَوَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ قِيلَ
: مَنْ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ الَّذِي لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وَفِيْ رِوَايَةٍ لمسلملا يَدْخُلُ الجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়।” জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন্ ব্যক্তি? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “যে লোকের
প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে না।”
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না। (বুখারী ৬০১৬, মুসলিম ১৮১ নং) হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৭৬৬
গ) কিয়ামতের আলামত
প্রতিবেশীর প্রতি জুলুম অত্যাচার করা কিয়ামতের
অম্যতম আলামত। রাসূল (সাঃ) বলেন,
حَدَّثَنَا مَخْلَدُ بْنُ مَالِكٍ قَالَ:
حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَغْرَاءَ قَالَ:
حَدَّثَنَا بُرَيْدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ أَبِي مُوسَى:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
«لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَقْتُلَ الرَّجُلُ جَارَهُ وَأَخَاهُ وَأَبَاهُ»
আবু মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশী, তার ভাই এবং তার পিতাকে হত্যা না করা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ১১৭)
প্রতিবেশীর
মাঝে উপহার আদান প্রদান করা
ক) সামান্য পরিমাণ হলেও উপহার দেয়া
প্রতিবেশীর মাঝে উপহার আদান প্রদানের ক্ষেত্রে
সামান্য পরিমাণ হলেও তা গ্রহণ বা প্রদান করতে অবহেলা না করা। রাসূল সাঃ বলেন,
حَدَّثَنَا عَاصِمُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنِ الْمَقْبُرِيِّ، {عَنْ أَبِيهِ،} عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ
" يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ لاَ تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا، وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ ".
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেছেন, হে মুসলিম
নারীগণ! কোন মহিলা প্রতিবেশিনী যেন অপর মহিলা প্রতিবেশিনীর হাদিয়া তুচ্ছ মনে না
করে,
এমনকি তা ছাগলের সামান্য গোশতযুক্ত হাড় হলেও। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৫৬৬)
রাসূল সাঃ আরো বলেন,
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ الْخَزَّازُ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ الْجَوْنِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الصَّامِتِ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ، عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ
" إِذَا عَمِلْتَ مَرَقَةً فَأَكْثِرْ مَاءَهَا وَاغْتَرِفْ لِجِيرَانِكَ مِنْهَا "
আবূ যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেনঃ তুমি তরকারী রান্না করলে তাতে ঝোল বেশী দিও এবং তোমার প্রতিবেশীদের
পযর্ন্ত তা পৌঁছিও।
ফুটনোটঃ [৩৩৬২] মুসলিম ২৬২৫, তিরমিযী ১৮৩৩, আহমাদ ২০৮১৭, ২০৮৭৩,
২০৯১৮, দারেমী ২০৭৯, সহীহাহ
১৩৬৮। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবী আবু আমির আল-খাযযায সম্পর্কে আবু
আহমাদ আল-হাকিম বলেন, তিনি আহলে ইলমের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়।
আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় তবে
তা দলীলযোগ্য নয়। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি সিকাহ।
ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস
বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। ইমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি
নির্ভরযোগ্য নয়। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ২৮১২, ১৩/৪৭ নং
পৃষ্ঠা) সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৩৬২
খ) উপহার প্রদানে নিকটতম প্রতিবেশী কে প্রাধান্য
দেয়া
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ الْجَوْنِيِّ، عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ـ رَجُلٍ مِنْ بَنِي تَيْمِ بْنِ مُرَّةَ ـ عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ لِي جَارَيْنِ فَإِلَى أَيِّهِمَا أُهْدِي قَالَ
" إِلَى أَقْرَبِهِمَا مِنْكِ بَابًا ".
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র
রসূল! আমার দু’জন প্রতিবেশী
আছে। এ দু’জনের কাকে আমি
হাদিয়া দিব? তিনি ইরশাদ করলেন, এ দু’জনের মাঝে যার দরজা তোমার বেশি নিকটে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৫৯৫)
সমাপনী
পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের আলোকে আমরা বুঝতে
পারি কোন অবস্থাতেই প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব পালন থেকে আমরা মুক্ত নই। প্রতিবেশীর
প্রতি দায়িত্ব পালন শুধু তার উপকারের জন্যই নয় বরং নিজের সুখ শান্তি, নিরাপত্তা এবং ইহকাল-পরকালের কল্যাণ লাভেও এটা আমাদের কাজে
আসবে। তাই সর্বদা প্রতিবেশীর প্রতি সদাচারণে আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। মহান আল্লাহ
আমাদেরকে তাউফিক দান করুন।
এই খুতবা টি
No comments