পিতামাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি

 
পিতামাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি
পিতামাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি

পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার তাগিদ

وَقَضٰی رَبُّکَ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّاۤ اِیَّاہُ وَبِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا ؕ اِمَّا یَبۡلُغَنَّ عِنۡدَکَ الۡکِبَرَ اَحَدُہُمَاۤ اَوۡ کِلٰہُمَا فَلَا تَقُلۡ لَّہُمَاۤ اُفٍّ وَّلَا تَنۡہَرۡہُمَا وَقُلۡ لَّہُمَا قَوۡلًا کَرِیۡمًا

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে উহ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। (বনী ইসরাঈল ১৭:২৩)

وَاخۡفِضۡ لَہُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحۡمَۃِ وَقُلۡ رَّبِّ ارۡحَمۡہُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا ؕ

তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। (বনী-ইসরাঈল ১৭:২৪)

وَوَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡہِ ۚ حَمَلَتۡہُ اُمُّہٗ وَہۡنًا عَلٰی وَہۡنٍ وَّفِصٰلُہٗ فِیۡ عَامَیۡنِ اَنِ اشۡکُرۡ لِیۡ وَلِوَالِدَیۡکَ ؕ اِلَیَّ الۡمَصِیۡرُ

আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে।

(লোকমান  ৩১:১৪)

পিতামাতার সাথে সুন্দর আচরণ এর গুরুত্ব

عَبْدِ اللَّهِ ـ قَالَ سَأَلْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ قَالَ " الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا "‏‏. قَالَ ثُمَّ أَىُّ قَالَ " ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ "‏‏. قَالَ ثُمَّ أَىّ قَالَ " الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ "‏‏. قَالَ حَدَّثَنِي بِهِنَّ وَلَوِ اسْتَزَدْتُهُ لَزَادَنِي‏.

আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ্‌র নিকট কোন্‌ কাজ সব থেকে অধিক পছন্দনীয়? তিনি বললেনঃসময় মত সালাত আদায় করা। (আবদুল্লাহ) জিজ্ঞেস করলেন: তারপর কোন্‌টি? তিনি বললেনঃপিতা-মাতার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা। আবদুল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন: তারপর কোন্‌টি? তিনি বললেনঃআল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করা। আবদুল্লাহ বললেনঃনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগুলো সম্পর্কে আমাকে বলেছেন। আমি তাঁকে আরও অধিক প্রশ্ন করলে, তিনি আমাকে আরও জানাতেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩২) সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৯৭০

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، أَنَّ رَجُلاً، قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا قَالَ " هُمَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ " .

আবূ উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! সন্তানের উপর মাতা-পিতার কী অধিকার আছে? তিনি বলেনঃ তারা তোমার জান্নাত এবং তোমার জাহান্নাম। [২৯৯৪]

ফুটনোটঃ [২৯৯৪] হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন।মিশকাত ৪৯৪১, আর রাদ্দু আলাল বালীক ১২২, দঈফ আল-জামি ৬০৯৮। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৬২

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «رِضَا اللَّهِ فِي رِضَا الْوَالِدَيْنِ، وَسَخَطُ اللَّهِ فِي سَخَطِ الْوَالِدَيْنِ» أَخْرَجَهُ التِّرْمِذِيُّ، وَصَحَّحَهُ ابْنُ حِبَّانَ وَالْحَاكِمُ

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মাতা-পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুটি (লাভ হয়), তাঁদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে। [১৫৬৮]

ফুটনোটঃ [১৫৬৮] তিরমিযী ১৯০০, ইবনু মাজাহ ২০৮৯, ৩৬৬৩, আহমাদ ২১২১০, ২৬৯৮০।  বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ১৪৫৭

পিতা-মাতা অমুসলিম হলেও উত্তম ব্যবহার করা

وَاِنۡ جَاہَدٰکَ عَلٰۤی اَنۡ تُشۡرِکَ بِیۡ مَا لَیۡسَ لَکَ بِہٖ عِلۡمٌ ۙ فَلَا تُطِعۡہُمَا وَصَاحِبۡہُمَا فِی الدُّنۡیَا مَعۡرُوۡفًا ۫ وَّاتَّبِعۡ سَبِیۡلَ مَنۡ اَنَابَ اِلَیَّ ۚ ثُمَّ اِلَیَّ مَرۡجِعُکُمۡ فَاُنَبِّئُکُمۡ بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ

পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো।

(লোকমান ৩১:১৫ )

قَالَ اَرَاغِبٌ اَنۡتَ عَنۡ اٰلِہَتِیۡ یٰۤـاِبۡرٰہِیۡمُ ۚ لَئِنۡ لَّمۡ تَنۡتَہِ لَاَرۡجُمَنَّکَ وَاہۡجُرۡنِیۡ مَلِیًّا

পিতা বললঃ যে ইব্রাহীম, তুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ? যদি তুমি বিরত না হও, আমি অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণনাশ করব। তুমি চিরতরে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও। (মারইয়াম   ১৯:৪৬)

قَالَ سَلٰمٌ عَلَیۡکَ ۚ سَاَسۡتَغۡفِرُ لَکَ رَبِّیۡ ؕ اِنَّہٗ کَانَ بِیۡ حَفِیًّا

ইব্রাহীম বললেনঃ তোমার উপর শান্তি হোক, আমি আমার পালনকর্তার কাছে তোমার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করব। নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি মেহেরবান।

(মারইয়াম ১৯:৪৭)

অন্যায় কাজে আনুগত্য নয়

وَاِنۡ جَاہَدٰکَ عَلٰۤی اَنۡ تُشۡرِکَ بِیۡ مَا لَیۡسَ لَکَ بِہٖ عِلۡمٌ ۙ فَلَا تُطِعۡہُمَا

পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না (লোকমান ৩১:১৫ )

 عَنْ عِمْرَانَ بن حُصَيْنٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ

ইমরান বিন হুস্বাইন থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, স্রষ্টার অবাধ্যতা করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য নেই। (ত্বাবারানী ১৪৭৯৫, আহমাদ ২০৬৫৩ নং) হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৮২৩

পিতা মাতার খেদমত এর কারণে গুনাহ মাফ হয়

عَبْدَ اللهِ بْنَ عَمْرٍو رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَاسْتَأْذَنَهُ فِي الْجِهَادِ فَقَالَ أَحَيٌّ وَالِدَاكَ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَفِيْهِمَا فَجَاهِدْ

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিহাদে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করল। তখন তিনি বললেন, তোমার পিতামাতা জীবিত আছেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তবে তাঁদের খিদমাতের চেষ্টা কর। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩০০৪

পিতা মাতার খেদমতের কারনা হায়াত রিজিক বৃদ্ধি পায়

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ رِزْقُهُ أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ "‏‏.

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তাঁর মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করে।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০৬৭

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " رَغِمَ أَنْفُهُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُهُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُهُ " . قِيلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ " مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا ثُمَّ لَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ " .

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সে ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক, আবার সে ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক, আবার তার নাক ধূলিমলিন হোক। জিজ্ঞেস করা হলো, কার হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে কিংবা তাদের একজনকে বার্ধক্যজনিত অবস্থায় পেল, এরপরেও সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। (ই. ফা. ৬২৮০, ই.সে. ৬৩২৯) সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৪০৫

পিতা-মাতার অবাধ্যতার শাস্তি

قُلۡ تَعَالَوۡا اَتۡلُ مَا حَرَّمَ رَبُّکُمۡ عَلَیۡکُمۡ اَلَّا تُشۡرِکُوۡا بِہٖ شَیۡئًا وَّبِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا ۚ وَلَا تَقۡتُلُوۡۤا اَوۡلَادَکُمۡ مِّنۡ اِمۡلَاقٍ ؕ نَحۡنُ نَرۡزُقُکُمۡ وَاِیَّاہُمۡ ۚ وَلَا تَقۡرَبُوا الۡفَوَاحِشَ مَا ظَہَرَ مِنۡہَا وَمَا بَطَنَ ۚ وَلَا تَقۡتُلُوا النَّفۡسَ الَّتِیۡ حَرَّمَ اللّٰہُ اِلَّا بِالۡحَقِّ ؕ ذٰلِکُمۡ وَصّٰکُمۡ بِہٖ لَعَلَّکُمۡ تَعۡقِلُوۡنَ

আপনি বলুনঃ এস, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শুনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন। তাএই যে, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না, পিতা-মাতার সাথে সদয় ব্যবহার করো স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রের কারণে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে আহার দেই, নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা বুঝ।

(আল আনআম :১৫১)

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ الإِشْرَاكُ بِاللهِ وَقَتْلُ النَّفْسِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَقَوْلُ الزُّورِ أَوْ قَالَ وَشَهَادَةُ الزُّورِ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ্ হচ্ছে আল্লাহ্‌র সঙ্গে শরীক করা, প্রাণ হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া আর মিথ্যা বলা, কিংবা বলেছেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৩৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪০৫) সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৮৭১

খেদমতে পেতে মায়ের অধিকার

وَوَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡہِ اِحۡسٰنًا ؕ حَمَلَتۡہُ اُمُّہٗ کُرۡہًا وَّوَضَعَتۡہُ کُرۡہًا ؕ وَحَمۡلُہٗ وَفِصٰلُہٗ ثَلٰثُوۡنَ شَہۡرًا ؕ حَتّٰۤی اِذَا بَلَغَ اَشُدَّہٗ وَبَلَغَ اَرۡبَعِیۡنَ سَنَۃً ۙ قَالَ رَبِّ اَوۡزِعۡنِیۡۤ اَنۡ اَشۡکُرَ نِعۡمَتَکَ الَّتِیۡۤ اَنۡعَمۡتَ عَلَیَّ وَعَلٰی وَالِدَیَّ وَاَنۡ اَعۡمَلَ صَالِحًا تَرۡضٰہُ وَاَصۡلِحۡ لِیۡ فِیۡ ذُرِّیَّتِیۡ ۚؕ اِنِّیۡ تُبۡتُ اِلَیۡکَ وَاِنِّیۡ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ

আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন শক্তি-সামর্থ্যের বয়সে ও চল্লিশ বছরে পৌছেছে, তখন বলতে লাগল, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এরূপ ভাগ্য দান কর, যাতে আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম।

(আল আহ্‌কাফ ৪৬:১৫)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ صَحَابَتِي قَالَ " أُمُّكَ "‏‏. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ " أُمُّكَ "‏‏. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ " أُمُّكَ "‏‏. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ " ثُمَّ أَبُوكَ "‏‏. وَقَالَ ابْنُ شُبْرُمَةَ وَيَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ حَدَّثَنَا أَبُو زُرْعَةَ مِثْلَهُ‏.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ  তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেনঃতোমার মা। লোকটি বললোঃ অতঃপর কে? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতোমার মা। সে বললোঃ অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বললোঃ অতঃপর কে? তিনি বললেনঃঅতঃপর তোমার বাবা।

ইবনু শুবরুমাহ বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু আইউব আবূ যুরআ (রাঃ) থেকে এ রকমই বর্ণনা করেছেন।[মুসলিম ৪৫/১, হাঃ ২৫৪৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৩) সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৯৭১

মাতা-পিতার ইন্তেকালের পর করণীয়

عَنْ أَبِي أُسَيْدٍ، مَالِكِ بْنِ رَبِيعَةَ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سُلَيْمٍ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَبَقِيَ مِنْ بِرِّ أَبَوَىَّ شَىْءٌ أَبَرُّهُمَا بِهِ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِمَا قَالَ " نَعَمْ الصَّلاَةُ عَلَيْهِمَا وَالاِسْتِغْفَارُ لَهُمَا وَإِيفَاءٌ بِعُهُودِهِمَا مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِمَا وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِي لاَ تُوصَلُ إِلاَّ بِهِمَا " .

আবূ উসায়দ মালিক বিন রাবীআহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন সালামা গোত্রের এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের সাথে সদাচারের কিছু অবশিষ্ট আছে কি, যা আমি তাদের সাথে করতে পারি? তিনি বলেনঃ হাঁ, তাদের জন্য দুআ করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের মৃত্যুর পর তাদের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পালন করা, তাদের বন্ধুদের সম্মান করা এবং (অপরের সাথে) তাদের গড়ে তোলা সম্পর্ক উজ্জীবিত রাখা। [২৯৯৬]

 

ফুটনোটঃ [২৯৯৬] আবূ দাউদ ৫১৪২। মিশকাত ৪৯৩৬। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৬৪

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ " .

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত 'আমাল বন্ধ হয়ে যায় তিন প্রকার 'আমাল ছাড়া। ১. সদাকাহ্‌ জারিয়াহ্‌ অথবা ২. এমন 'ইল্‌ম যার দ্বারা উপকার হয় অথবা ৩. পুণ্যবান সন্তান যে তার জন্যে দুআ করতে থাকে। ( ই. ফা. ৪০৭৭, ই. সে. ৪০৭৬)। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪১১৫

পিতা মাতার জন্য দোয়া করা

وَاخۡفِضۡ لَہُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحۡمَۃِ وَقُلۡ رَّبِّ ارۡحَمۡہُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا ؕ

তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।

(বনী-ইসরাঈল ১৭:২৪)

وَعَنهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: « مِنَ الكَبَائِر شَتْمُ الرَّجُل وَالِدَيهِ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَهَلْ يَشْتُمُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ ؟! قَالَ: «نَعَمْ، يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أبَاه، وَيَسُبُّ أُمَّهُ، فَيَسُبُّ أُمَّهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

وفي رِوَايَةٍ: «إنَّ مِنْ أكْبَرِ الكَبَائِرِ أنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ، قِيلَ :يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، كَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيهِ ؟! قَالَ: يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أباهُ، وَيَسُبُّ أُمَّهُ، فَيَسُبُّ أُمَّهُ

উক্ত সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কাবীরাহ গুনাহসমূহের একটি হল আপন পিতা-মাতাকে গালি দেওয়া।’’ জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! আপন পিতা-মাতাকে কি কোনো ব্যক্তি গালি দেয়? তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, সে লোকের পিতাকে গালি-গালাজ করে, তখন সেও তার পিতাকে গালি-গালাজ করে থাকে এবং সে অন্যের মা-কে গালি দেয়, সুতরাং সেও তার মা-কে গালি দেয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘কাবীরাহ গুনাহসমূহের একটি হল নিজের পিতা-মাতাকে অভিশাপ করা।’’ জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! মানুষ নিজের পিতা-মাতাকে কিভাবে অভিশাপ করে? তিনি বললেন, ‘‘সে অপরের পিতাকে গালি-গালাজ করে, তখন সেও তার পিতাকে গালি-গালাজ করে থাকে। আর সে অন্যের মা-কে গালি দেয়, বিনিময়ে সেও তার মা-কে গালি দেয়।’’

ফুটনোটঃ

[১] সহীহুল বুখারী ৫৯৭৩, মুসলিম ৯০, তিরমিযী ১৯০২, আবূ দাউদ ৫১৪১, আহমাদ ৬৪৯৩, ৬৮০১, ৬৯৬৫, ৬৯৯০ রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৩৪৩

 


No comments

Powered by Blogger.