সৈনিক জীবনে আনুগত্য ও নেতৃত্যের গুরুত্ব

সৈনিক জীবনে আনুগত্য ও নেতৃত্যের গুরুত্ব
সৈনিক জীবনে আনুগত্য ও নেতৃত্যের গুরুত্ব 

ভুমিকাঃ আনুগত্য অর্থ মান্য করা, মেনে চলা, আদেশ ও নিষেধ পালন করা, উপরন্তু কোন কর্তৃপক্ষের আদেশ অনুযায়ী কাজ করা। আল-কুরআন এবং রাসূলের হাদীসে এর প্রতি শব্দ হিসেবে আমরা যেটা পাই সেটা হল এতায়াত। যার বিপরীত শব্দ হল মাছিয়াত বা এহইয়ান। মাছিয়াত অর্থ নাফরমানী করা, হুকুম অমান্য করা প্রভৃতি।

ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻭَﺃُﻭﻟِﻲ ﺍﻟْﺄَﻣْﺮِ ﻣِﻨْﻜُﻢْ
আল্লাহর এতায়াত কর, রাসূলের এতায়াত কর এবং উলিল আমরের এতায়াত কর। (আন নিসা: ৫৯)

সৈনিক জীবনে আনুগত্যের গুরুত্বঃ সৈনিক জীবনে আনুগত্যের গুরুত্ব অপরিসীম। আনুগত্য ছাড়া সৈনিক জীবন কল্পনা করা যায় না। আর আনুগত্য বা এতায়াত ছাড়া অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছা যায় না। তাই নিন্মে আনুগত্যের গুরুত্ব সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হল।

(ক) আনুগত্য কি?
আনুগত্যের আরবীতে বলা হয় اطاعلة , আনুতগ্য হল মানা বা যা আদেশ করা হবে তা পালন করা। সুরাহ নিসার ৫৯ নং আয়াতে  আল্লাহ তাআলা বলেন 
‏يَٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُوا۟ ٱلرَّسُولَ وَأُو۟لِى ٱلْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। 

(খ) আনুগত্য ছাড়া জীবন হতে পারে নাঃ
আনুগত্য ছাড়া জীবন হতে পারে না। বিশ্বনবী (সাঃ) বলেন,
لا طاعة الا با الجماعة 
আনুগত্য ছাড়া কোন সংগঠন হতে পারে না। 

(গ) পছন্দ হোক না হোক আনুত্য করতে হবেঃ
যখন নেতৃস্থানীয় কেউ আদেশ করে আর তা ইসলাম বিরোধী নয় তবে তা পালন করা ফরজ। নিজের কাছে ভালো লাগুক বা না লাগুক। 
এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে-

عن ابن عمر الا وكره أحب فيما عة والطا السمع المسلم المرء علي قال وسلم  عليه الله صلي النبي عن عنهما  الله رضي  عليه متفق طاعة ولا سمع فلا بمعصية مر أ فإذا بمعصية يأمر
অর্থাৎ- প্রখ্যাত হাদিস বিষারদ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূলে আকরাম (স.) বলেছেন, মুসলমানদের উপর নেতার আদেশ শোনা ও মানা অপরিহার্য কর্তব্য। চাই সে আদেশ তার পছন্দনীয় হোক আর অপছন্দনীয় হোক। তবে হ্যাঁ, যদি আল্লাহর নাফরমানীমূলক কোন কাজের নির্দেশ হয় তবে সেই নির্দেশ শোনা ও মানার কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারী ও মুসলিম)৷

অন্য হাদিসে আল্লাহর রাসুল বলেন। 
 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَرَسُولُ اللهِ : « مَنْأطَاعَنِي فَقَدْ أطَاعَ اللهَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللهَ، وَمَنْ يُطِعِ الأَمِيرَ فَقَدْ أطَاعَنِي، وَمَنْ يَعصِ الأميرَ فَقَدْ عَصَانِي ». متفقٌعَلَيْهِ 
বাংলা অনুবাদ আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহর আনুগত্য করল এবং যে আমার অবাধ্যতা করল, সে (আসলে) আল্লাহর অবাধ্যতা করল। আর যে ব্যক্তি নেতার আনুগত্য করল, সে (আসলে) আমার আনুগত্য করল এবং যে নেতার অবাধ্যতা করল, সে (আসলে) আমার অবাধ্যতা করল।’’ [বুখারি ২৯৫৭, নাসায়ি ৪১৯৩,]

(ঘ) হাবসি গোলামের আনুগত্যঃ
যখন কোন হাবসি গোলামকেও আমিরের দায়িত্ব দেয়া হয় তখন তার আদেশ মানা সকলের উপর ফরজ। এই বিষয়ে বিশ্বনবী (সাঃ) বলেন। 

اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا، وَإِنْ أُمِّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌحَبَشِيٌّ كَأَنَّ رَأْسَهُ زَبِيبَة

অর্থঃ (রাসূল সা. বিদায় হজ্বের ভাষনে বলেছিলেন) যদি কোন হাবসী ক্রীতদাসকেও তোমাদের নেতা বানিয়ে দেয়া হয় যার মাথা কিসমিসের মত, তা হলেও তোমরা তার আনুগত্য কর । (বুখারী)

(ঙ) নেতাকে লাঞ্চিত করা জায়েজ নাইঃ
নেতার আনুগত্য সর্বদা কাম্য বিষয়। এমনকি নেতার মধ্যে খারাপ কিছু দেখলেও বিশ্বনবী বলেন, তোমাদের কেউ যদি আমিরের মধ্যে অপ্রীতিকর কোন বিষয় লক্ষ করে তবে সে যেন ধৈর্য্য ধারণ করে। কেননা, যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে দূরে সরে গিয়ে মৃত্যু বরণ করে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু। (বুখারী ও মুসলিম) 

অন্য হাদিসে বিশ্বনবী বলেন। যে ব্যক্তি রাষ্টের প্রধান কে লাঞ্চিত করে আল্লাহ তাকে লাঞ্চিত করবেন। (তিরমিজি) 

(চ)  সাহাবাদের জীবনে আনুগত্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তঃ
মুতার যুদ্ধের কাহিনী।

(ছ) আনুগত্যহীন জীবন বিপর্যয় ডেকে আনেঃ
ওহুদ যুদ্ধের কাহিনী। 

নেতৃত্যের গুরুত্ব 
ভুমিকাঃ মানুষের জীবনে নেতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। নেতৃত্ব ছাড়া কোন জাতি তার অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে পারে না। বর্তমান পৃথিবীতে মুসলমানদের অধঃপতনের মূল কারণ হল নেতৃত্ব হাত ছাড়া। এক সময় মুসলমান সারা পৃথিবী শাসন করেছে। বিশ্বনবী (সাঃ) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করলেন তখন বুঝতে পারলেন যে আল্লাহ তাআলা তাঁর উপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন নেতৃত্বের আসনে আসিন না হলে সে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। তাই তিনি নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন এবং সমাজে একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশ কায়েম করতে সক্ষম হয়েছেন। 
নেতার দায়িত্ব পাওয়ার পর তাঁর আদেশ পালন করা জরুরি।

এই বিষয়ে সুরাহ নিসার ৫৯ নং আয়াতে  আল্লাহ তাআলা বলেন 

‏يَٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُوا۟ ٱلرَّسُولَ وَأُو۟لِى ٱلْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। 

বিশ্বনবী (সাঃ) বলেন কোন হাবসি গোলামকে ও যদি নেতা বানিয়ে দেয়া হয় পরে তিনি আল্লাহ ও রাসুলের বিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেন তবে তাঁর আদেশ পালন করা ফরজ। 

যিনি নেতা হবে, নেতৃত্বের আসনে আসিন হবেন তাঁর মধ্যে কিছু গুণাবলী থাকা প্রয়োজন। 
  1. আল্লাহ ভীরু, নেক ও চরিত্রবান হতে হবে।
  2. ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। 
  3. অধিনস্থদের কল্যাণে নিয়োজিত থাকবে।
  4. কারো প্রতি জুলুম বা খিয়ানত করবে না। 
  5. কোমল হৃদয়ের অধিকারী হবে।
  6. অধিনস্থদের ভুল কে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা।
  7. অধিনস্থদের প্রতি পূর্ণ খেয়াল রাখা।
  8. শোনা কথায় কান না দিয়ে যাচাইবাছাই করা।
  9. কোন বিষয়ে পক্ষপাত মূলক আচরণ না করা। 
সমাপনীঃ আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে দায়িত্বশীলকে তথ্য নেতৃস্থানীয় লোকদের কে যেমনি ভাবে কিছু গুণাবলী অর্জন করতে হবে তেমনি অধীনস্থদের তা অবশ্যই মান্য করতে হবে। আর বিশেষ ভাবে সৈনিক জীবনে এই আনুগত্যের বিকল্প নাই। 

No comments

Powered by Blogger.