জুমুয়ার সালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

 

জুমু'আর দিন মুসলমানদের একটি বিশেষ দিন। জাহেলি যুগে এদিনকে ইয়াওমুল আরবা বলা হত। ইসলামের আবির্ভাবের পর এদিনকে ইয়াওমুল জুমুয়া বলে নামকরণ করা হয়। জুমুআ অর্থ একত্রিত করা, একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবন্দী হওয়া। এ হিসেবে ইয়াওমুল জুমুয়া অর্থ একত্রিত হবার দিন। এটিকে সম্মেলন ও বলা যেতে পারে। 

জুমার দিনের গুরুত্ব

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰہِ وَذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰہِ وَاذۡکُرُوا اللّٰہَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (আল জুমুআহ ৬২:৯-১০)

وَعَنْ سَلمَانَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَومَ الجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِن طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ، ثُمَّ يَخْرُجُ فَلاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإمَامُ، إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الجُمُعَةِ الأُخْرَى». رواه البخاري

সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে কোন ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল ও সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করে, নিজস্ব তেল গায়ে লাগায় অথবা নিজ ঘরের সুগন্ধি (আতর) ব্যবহার করে, অতঃপর (মসজিদে) গিয়ে দুজনের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি না করেই (যেখানে স্থান পায়, বসে যায়) এবং তার ভাগ্যে যত রাকআত নামায জোটে, আদায় করে । তারপর ইমাম খুতবা আরম্ভ করলে নীরব থাকে, সে ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট জুমআহ থেকে পরবর্তী জুমআহ পর্যন্ত কৃত সমুদয় (সাগীরা) গুনাহরাশিকে মাফ করে দেওয়া হয় ।

(সহীহুল বুখারী ৮৮৩, ৯১০, নাসায়ী ১৪০৩, আহমাদ ২৩১৯৮, ২৩২০৬, ২৩২১৩, দারেমী ১৫৪১)  রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১১৬১

عَنِ ابْنِ عُمَرَ وَأَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّهُمَا قَالَا: سَمِعْنَا رَسُولَ اللّهِ ﷺ يَقُولُ عَلَى اعْوَادِ مِنْبَرِه: «لِيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجُمُعَاتِ أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللّهُ عَلى قُلُوبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُونُنَّ مِنَ الْغَافِلِيْنَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তাঁরা বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ লোকেরা যেন জুমুআর সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছেড়ে না দেয়। (যদি ছেড়ে দেয়) আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরসমূহে মুহর মেরে দেবেন। অতঃপর সে ব্যক্তি অমনোযোগীদের মধ্যে গণ্য হবে। 

মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৩৭০

জুমুয়ার দিনের ফজিলত

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰہِ وَذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰہِ وَاذۡکُرُوا اللّٰہَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।

(আল জুমুআহ ৬২:৯-১০)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ فِيهِ خُلِقَ آدَمُ وَفِيهِ أُدْخِلَ الْجَنَّةَ وَفِيهِ أُخْرِجَ مِنْهَا وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ إِلاَّ فِي يَوْمِ الْجُمُعَةِ ‏"‏

আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমুআর দিন সর্বোত্তম। এ দিন আদাম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এ দিন সেখান থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়েছে, জুমুআর দিনই কিয়ামাত সংঘটিত হবে। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৪৭, ইসলামীক সেন্টার, ১৮৫৪)

সহীহ মুসলিম হাদিস নম্বরঃ ১৮৬২

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الْكَبَائِرُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ 

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, এক জুমুআহ্ হতে অপর জুমুআহ্ পর্যন্ত এবং এক রমাযান হতে আরেক রমাযান পর্যন্ত সব গুনাহে্র কাফফারাহ্ হয়, যদি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হয়।

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)

অধ্যায়ঃ পর্ব-৪ঃ সলাত (كتاب الصلاة)

হাদিস নম্বরঃ ৫৬৪

মুসলিম ২৩৩, আহমাদ ৯১৯৭, সহীহাহ্ ৩৩২২, সহীহ আল জামি৩৮৭৫, সহীহ আত তারগীব ৬৮৪। 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنِ اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ غُسْلَ الْجَنَابَةِ ثُمَّ رَاحَ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَدَنَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّانِيَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَقَرَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّالِثَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ كَبْشًا أَقْرَنَ، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الرَّابِعَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ دَجَاجَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الْخَامِسَةِ فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَيْضَةً، فَإِذَا خَرَجَ الإِمَامُ حَضَرَتِ الْمَلاَئِكَةُ يَسْتَمِعُونَ الذِّكْرَ ‏"‏‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআর দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুত্‌বা দেয়ার জন্য বের হন তখন মালাইকা (ফেরেশতাগণ) যিক্‌র শ্রবণের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকে।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৮৮১

عَنْ أَبِي بُرْدَةَ بْنِ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ، قَالَ قَالَ لِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ أَسَمِعْتَ أَبَاكَ يُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي شَأْنِ سَاعَةِ الْجُمُعَةِ قَالَ: قُلْتُ نَعَمْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «هِيَ مَا بَيْنَ أَنْ يَجْلِسَ الإِمَامُ إِلَى أَنْ تُقْضَى الصَّلاَةُ».

আবূ মূসা আল আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তোমার পিতাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে জুমুআর দিনের বিশেষ মুহূর্তটি সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছ? বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি পিতাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ ইমামের বসা থেকে সলাত শেষ করার মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সে মুহূর্তটি নিহিত। ( ই.ফা. ১৮৪৫, ই.সে. ১৮৫২)

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৮৬০

 জুমার দিনের সুন্নত ও মুস্তাহাব আমলসমূহ

১) গোসল করা: জুমার দিন গোসল করা সুন্নত ও সওয়াবের কাজ.

২) মেসওয়াক করা মেসওয়াক দ্বারা অথবা ফেস্ট দ্বারা দাঁত ব্রাশ করলেও সওয়াব পাওয়া যাবে.

৩) সুগন্ধি ব্যবহার করা আতর সুগন্ধি তেল মাখা সুন্নত

৪) উত্তম পোষাক পড়া এই দিনে উত্তম পোষাক পরিধান করা সুন্নত

৫) জুম'আর সালাতের জন্য দ্রুত ও আগে আগে মসজিদে যাওয়ার সওয়াবের কাজ

৬) ধীর স্থির ও গাম্ভীর্যের সাথে মসজিদের দিকে যাওয়া

৭) ইমামের নিকটবর্তী বসা তবে কারো অসুবিধা করে নয়

৮) জুমার দিনে ও রাত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উপর বেশী বেশী দরুদ পড়া

৯) জুমার দিন গোসলের পূর্বে হাত ও পায়ের নখ কাটা চুল কাটা বড় নাভির নিচের লোম কাটার সুন্নত

১০) জুমার দিন সালাতের পূর্বে বা পরে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা

১১) মসজিদে প্রবেশ করেই দুই রাকাত সালাত আদায় করা

১২) মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শ্রবণ করা এবং নীরবতা বজায় রাখা

১৩) জুমার দিনে বেশি বেশি দুআ করা

(বুখারী, জুমুআ অধ্যায়)

উপসংহার

জুমুয়ার সালাতের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতি সপ্তাহে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মিলন। যাতে খুতবার মাধ্যমে একটি দেশ, একটি সমাজ তথা মুসলিম উম্মাহকে সামাজিক, ধর্মীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকে। এতে ব্যক্তি ও সমাজ সংশোধন ছাড়াও দুনিয়া ও আখিরাতের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়। 

Download

No comments

Powered by Blogger.