অন্যের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন | জুমুয়ার খুতবা
অন্যের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন | জুমুয়ার খুতবা |
অন্যের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন
یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ ذَکَرٍ وَّاُنۡثٰی وَجَعَلۡنٰکُمۡ شُعُوۡبًا وَّقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوۡا ؕ اِنَّ اَکۡرَمَکُمۡ عِنۡدَ اللّٰہِ اَتۡقٰکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।
(সূরা হুজুরাত ৪৯:১৩)
وَلَقَدۡ کَرَّمۡنَا بَنِیۡۤ اٰدَمَ وَحَمَلۡنٰہُمۡ فِی الۡبَرِّ وَالۡبَحۡرِ وَرَزَقۡنٰہُمۡ مِّنَ الطَّیِّبٰتِ وَفَضَّلۡنٰہُمۡ عَلٰی کَثِیۡرٍ مِّمَّنۡ خَلَقۡنَا تَفۡضِیۡلًا ٪
নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।
(সূরা বনি ইসরাইল ১৭:৭০)
অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡۤ اَحۡسَنِ تَقۡوِیۡمٍ ۫
আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।
(সূরা তীন ৯৫:৪)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، يَرْوِيهِ - قَالَ ابْنُ السَّرْحِ - عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيَعْرِفْ حَقَّ كَبِيرِنَا فَلَيْسَ مِنَّا " .
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দেরকে সম্মান করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯৪৩
عنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ لَيْسَ مِنْ أُمَّتِي مَنْ لَمْ يُجِلَّ كَبِيرَنَا وَيَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيَعْرِفْ لِعَالِمِنَا حَقَّهُ
উবাদাহ বিন স্বামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “সে ব্যক্তি আমার উম্মতের দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদের বড়দেরকে সম্মান দেয় না, ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং আলেমের অধিকার চেনে না।” (আহমাদ ২২৭৫৫, ত্বাবারানী, হাকেম, সহীহ তারগীব ৯৫)
হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৫৫
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " إِذَا أَتَاكُمْ كَرِيمُ قَوْمٍ فَأَكْرِمُوهُ " .
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের নিকট কোন সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তি এলে তোমরা তাকে যথাযথ সম্মান করো।
হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সহীহাহ ১২০৫, রাওদুন নাদীর ২৬৮।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৭১২
عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেটাই পছন্দ করবে, যা তার নিজের জন্য পছন্দ করে।
(মুসলিম ১/১৭ হাঃ ৪৫, আহমাদ ১২৮০১, ১৩৮৭৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১২)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৩
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلاَلِي الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلِّي " .
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কিয়ামাতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের কারণে একে অপরের প্রতি ভালবাসা স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া প্রদান করব। আজ এমন দিন, যেদিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই। (ই.ফা. ৬৩১৫, ই.সে. ৬৩৬৫)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৪৪২
যেভাবে আমরা অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে পারি
ক) হাসিমুখে কথা বলা
وَقُوۡلُوۡا لِلنَّاسِ حُسۡنًا
মানুষকে সৎ কথাবার্তা বলবে,
(সূরা বাকারা ২:৮৩)
খ) সালামের প্রচলন
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ الْإِسْلَامِ خَيْرٌ؟ قَالَ: «تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلَامَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ»
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলো, কোন ইসলাম উত্তম? তিনি বলেনঃ তোমার পরিচিত ও অপরিচিতজনকে তোমার আহার করানো এবং সালাম দেয়া। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)
আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ১০৬০
গ) বড়দের আদেশ-নির্দেশ মান্য করা
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَاَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَاُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡکُمۡ ۚ
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা নেতৃস্থানীয় তাদের।
(সূরা নিসা ৪:৫৯)
ঘ) বিশেষ ছয়টি দায়িত্ব পালন
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لِلْمُؤْمِنِ عَلَى الْمُؤْمِنِ سِتُّ خِصَالٍ يَعُودُهُ إِذَا مَرِضَ وَيَشْهَدُهُ إِذَا مَاتَ وَيُجِيبُهُ إِذَا دَعَاهُ وَيُسَلِّمُ عَلَيْهِ إِذَا لَقِيَهُ وَيُشَمِّتُهُ إِذَا عَطَسَ وَيَنْصَحُ لَهُ إِذَا غَابَ أَوْ شَهِدَ " . قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَمُحَمَّدُ بْنُ مُوسَى الْمَخْزُومِيُّ الْمَدَنِيُّ ثِقَةٌ رَوَى عَنْهُ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ وَابْنُ أَبِي فُدَيْكٍ .
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মু’মিনের জন্য আরেক মু’মিনের উপর ছয়টি দায়িত্ব রয়েছেঃ (১) সে অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাবে , (২) মারা গেলে তার জানাযায় উপস্থিত হবে , (৩) ডাকলে তাতে সাড়া দিবে ,(৪) তার সাথে দেখা হলে তাকে সালাম করবে (৫) সে হাঁচি দিলে তার জবাব দিবে এবং (৬) তার অনুপস্হিতিতে কিংবা উপস্থিতি সকল অবস্হায় তার শুভ কামনা করবে।
সহীহঃ সহীহাহ (৮৩২) , মুসলিম অনুরুপ।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৭৩৭
ঙ) উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ لَمْ يَشْكُرِ النَّاسَ لَمْ يَشْكُرِ اللَّهَ " . وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَالأَشْعَثِ بْنِ قَيْسٍ وَالنُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের প্রতি যে লোক কৃতজ্ঞ নয় আল্লাহ্ তা‘আলার প্রতিও সে কৃতজ্ঞ নয়।
পূর্বের হাদীসের সহায়তায় হাদীসটি সহীহ, প্রাগুক্ত।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৯৫৫
চ) অহংকার পরিহার করা
وَلَا تُصَعِّرۡ خَدَّکَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمۡشِ فِی الۡاَرۡضِ مَرَحًا ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یُحِبُّ کُلَّ مُخۡتَالٍ فَخُوۡرٍ ۚ
وَاقۡصِدۡ فِیۡ مَشۡیِکَ وَاغۡضُضۡ مِنۡ صَوۡتِکَ ؕ اِنَّ اَنۡکَرَ الۡاَصۡوَاتِ لَصَوۡتُ الۡحَمِیۡرِ
অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।
পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।
(সূরা লোকমান ৩১:১৮-১৯)
ছ) নিজেকে বিশুদ্ধ না ভাবা
ۚفَلَا تُزَکُّوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ ہُوَ اَعۡلَمُ بِمَنِ اتَّقٰی
অতএব তোমরা আত্নপ্রশংসা করো না। তিনি ভাল জানেন কে সংযমী।
(সূরা নজম ৫৩:৩২)
জ) কারো প্রতি হিংসা পোষণ না করা
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ " . أَوْ قَالَ " الْعُشْبَ " .
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই হিংসা পরিহার করবে। কারণ আগুন যেভাবে কাঠকে বা ঘাসকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসাও মানুষের নেক আমলকে খেয়ে ফেলে।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯০৩
ঝ) বিনয় বিনয় ও নম্র ভাবে চলা
وَعِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ ہَوۡنًا وَّاِذَا خَاطَبَہُمُ الۡجٰہِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا
রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম।
(সূরা ফুরকান ২৫:৬৩)
No comments