সৈনিক জীবনে দেশপ্রেমের গুরুত্ব

সৈনিক জীবনে দেশপ্রেমের গুরুত্ব
সৈনিক জীবনে দেশপ্রেমের গুরুত্ব

দেশপ্রেম হচ্ছে একজন ব্যক্তি বা একটি জনগোষ্ঠী কর্তৃক মাতৃভূমির প্রতি একধরনের আবেগপূর্ণ অনুরাগ বা ভালোবাসা। আর দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ পরস্পর সম্পৃক্ত হওয়ায় এটাকে জাতীয় অনুভূতি কিংবা জাতীয় অহংকারও বলা যেতে পারে। মানুষের জাতিগত, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অথবা ঐতিহাসিক পটভূমিকায় দেশভেদে দেশপ্রেমের ভিন্ন ভিন্ন রূপ পরিদৃষ্ট হলেও ব্যাপারটা আসলে এক ও অভিন্ন এবং দেশপ্রেমিক বলতে বোঝায় এমন সব ব্যক্তি, যাঁরা দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগে সর্বদা প্রস্তুত।


বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে জন এফ কেনেডি যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে অভিষিক্ত হন, তখন তিনি একটি চমৎকার কথা বলেছিলেন, আপনার দেশ আপনার জন্য কী করতে পারে সে প্রশ্ন করবেন না, প্রশ্ন করুন আপনি দেশের জন্য কী করতে পারেন।

কবিগুরু বলেছেন, দেশকে ভালো না বাসলে তাকে ভালো করে জানার ধৈর্য থাকে না; তাকে না জানলে তার ভালো করতে চাইলেও ভালো করা যায় না।

"স্বদেশের উপকারে নেই যার মন

কে বলে মানুষ তারে পশু সে জন।"

সেনা জীবনে দেশপ্রেম

১) সামরিক শপথ রক্ষা করা

সৈনিক জীবনে দেশপ্রেমের একটি অন্যতম রূপ হল সামরিক শপথ রক্ষা করা।প্রতিটি সৈনিককে মনে রাখতে হবে যে, এ শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিরাট দায়িত্ব কাঁধে পড়ল; শরীরে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও এই শপথ রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় মনে লালন করতে হবে। 

২) নিঃস্বার্থ জনসেবার মানসিকতা

একজন সৈনিক কে সার্বক্ষণিক দেশের মানুষের সেবার মন-মানসিকতা এবং সে অনুযায়ী কাজ করার মন মানসিকতা থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে যে এদেশের মানচিত্রের প্রতিটি ধূলিকণা রক্ষার দায়িত্ব সৈনিকদের। তাই দেশের মানুষের সেবা মানেই হলো একজন সৈনিকের প্রকৃত দেশ প্রেম।

৩) একনিষ্ঠতার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালন

একনিষ্ঠ ভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে একজন সৈনিকের প্রকৃত দেশ প্রেম ফুটে উঠে। প্রতিটি মানুষ যখন তার পেশাগত দায়িত্ব যথাযথভাবে আন্তরিকতার সাথে পালন করে তখনই একটি সংস্থা তার প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধনে সফল হয়ে উঠে। তাই একনিষ্ঠ ভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনে হলো একজন সৈনিকের দেশপ্রেমের একটি অন্যতম উদাহরণ। 

৪) সামরিক দক্ষতা বাড়ানো

উত্তরোত্তর সামরিক দক্ষতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা একজন সৈনিকের মনে লালন করা উচিত। একজন দক্ষ সৈনিক মানেই দেশের সম্পদ। তাই নিজেকে দেশের নিরাপত্তায় যোগ্য সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে সামরিক দক্ষতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

৫) রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্যের নিরাপত্তা

ব্যক্তি বস্তু তথ্য এ তিনটি জিনিসের নিরাপত্তা দানে একজন সৈনিক সর্বোচ্চ চেষ্টারত থাকবে। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্যের নিরাপত্তা নষ্ট হলে একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে। তাই একজন সৈনিক রাষ্ট্রের গোপন তথ্যের নিরাপত্তা দানে মনে প্রানে চেষ্টা করবে।

৬) প্রশ্নাতীত আনুগত্য

সৈনিক জীবনে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রশ্নাতীত আনুগত্যের বিকল্প নাই।  সেনা সদস্য গণ যখনই তাদের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার যথাযথ আনুগত্য প্রকাশ করবে তখনই তার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠিত হবে। প্রশ্নাতীত আনুগত্যের মাধ্যমে একজন সেনা সদস্যের প্রকৃত দেশ প্রেম ফুটে উঠে।

৭) দেশের জন্য জীবন উৎসর্গে সদা প্রস্তুত

কবির ভাষায়

"উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই!

নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান- ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।"

একজন সৈনিকের জীবনের চরম সার্থকতা হলো দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা। মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার জীবন। যখন সে এ জীবন উৎসর্গ করার সাহস লালন করে তখন তার মাঝেই দেশপ্রেমের প্রকৃত স্বরূপ ফুটে উঠে।

৮) সততা

বলা হয়ে থাকে "সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা।" জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সততার কোন বিকল্প নেই। সৎ মানুষ সকল কাজে সর্বাবস্থায় মানসিক তৃপ্তি লাভ করে থাকে। যেকোনো বৈধ উদ্দেশ্য সাধনে সততার বিকল্প নেই। তেমনি ভাবে একজন সৈনিকের জীবনে সততার বিকল্প কিছুই নেই। একজন সৈনিক সৎ হলে তার দ্বারা দেশের, দেশের মানুষের এবং তার সংস্থার কোন প্রকার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই সামরিক জীবনে সততার কোন বিকল্প নেই। 

৯) সহযোদ্ধাদের প্রতি সহমর্মিতা 

সহযোদ্ধাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন একজন সৈনিকের অন্যতম প্রধান গুণ। শান্তিকালীন বা যুদ্ধকালীন যেকোনো সময়ে সহযোদ্ধাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করা না হলে সেখানে বিশৃঙ্খলা হতে বাধ্য। সহযোদ্ধাদের ক্ষতি হলে নিজেরই ক্ষতি, আর নিজের ক্ষতি হলে দেশের ক্ষতি। তাই সহযোদ্ধাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শনের মাধ্যমে একজন সৈনিকের প্রকৃত দেশ প্রেমিক প্রমাণিত হয়।

 


No comments

Powered by Blogger.