মাদকাসক্তি ও এর ক্ষতিকর প্রভাব

মাদকাসক্তি ও এর ক্ষতিকর প্রভাব

মাদকাসক্তি ও এর ক্ষতিকর প্রভাব

ভূমিকা একটি সুন্দর ফুল বাগানকে বিনষ্ট করার জন্য যেমনি একটি হুতোম পেঁচাই যথেষ্ট। তেমনি তরুণ সমাজকে বিনষ্ট করার জন্য মাদকই যথেষ্ট। মাদক একটি সামাজিক ব্যাধি। বর্তমানে মাদকাসক্তি আমাদের সমাজে এক সর্বনাশা ব্যাধিরূপে বিস্তার লাভ করছে। আজকাল তরুণ প্রজন্মের কাছে অতি সহজেই মাদকদ্রব্য পৌঁছে গেছেসাধারণত মানুষ নেশার জন্য যা ব্যবহার করে তাই মাদক দ্রব্য। আবার সেটা হতে পারে ইনজেকশন, ধুমপান,বা যে কোন মাধ্যমে।

উদ্দেশ্য আজকের ক্লাসের উদ্দেশ্য হল  মাদকের ভয়াল ফলাফল বিষয়ে সতর্ক করা।

মাদকদ্রব্য মাদকাসক্তি বলতে বোঝায় যে দ্রব্য সেবনের ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে এবং ওই দ্রব্যের প্রতি নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। এ জাতীয় দ্রব্যকে বলা হয় মাদকদ্রব্য আর এমন মাদকদ্রব্যের প্রতি কোন ব্যক্তির আসক্তিকে মাদকাসক্তি বলে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের ৭৬ মিলিয়ন মানুষ মদপানের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন কঠিন রোগে ভুগছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বের সব রোগ-ব্যাধির ৩.৫ শতাংশ মদপানজনিত। মদপান ও মাতলামির কারণে প্রতিবছর শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ১৮৫ বিলিয়ন ডলার নষ্ট হয়।

বাংলাদেশে মাদকের কিছু ভয়াবহ চিত্র

ক। নেশার টাকার জন্য মাকে হত্যা, আদালতে ছেলের স্বীকারোক্তি।

- প্রথম আলো  

যমুনা রানী সরকারের (৫৫) স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই ছেলে পৃথক হন। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তিনি বাড়িতে একাই থাকতেন। মাদকাসক্ত এক ছেলে তাঁকে টাকার জন্য প্রায়ই মারপিট করতেন। শেষ পর্যন্ত টাকা না পেয়ে মাকে হত্যার পর বাড়ির পাশের বাগানে ফেলে রাখেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

খ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে নেশার টাকার জন্য মাকে কুপিয়ে জখম।

-একুশে টিভি  

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় নেশার টাকা না পেয়ে খুকি বেগম (৬৫) নামে এক গৃহকর্তীকে হাত-পা বেঁধে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তার ছেলে সোহানুর রহমান খোকন (২৯)। নিহত খুকি বেগম উপজেলার চিকাশি ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের আব্দুস ছামাদ মন্ডলের স্ত্রী। রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার গজারিয়া গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

গ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নেশার টাকার জন্য নিজ ঘরে আগুন!

- কালেরকণ্ঠ 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মায়ের দেওয়া অভিযোগে ছেলেকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার দুপুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পঙ্কজ বড়ুয়া এ সাজা প্রদান করেন। একই সঙ্গে মাদকাসক্ত ওই যুবককে এক হাজার টাকাও জরিমানা করা হয়।

সাজাপ্রাপ্ত যুবক হলেন, সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামের বজলু মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (২৬)তাকে পুলিশের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে তার মা সবজান বেগম এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে অভিযোগ দেন।

 

ঘ। শায়েস্তাগঞ্জে নেশার টাকার জন্য বাবাকে ছেলের মারধর।

-মানবজমিন 

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে নেশার টাকার জন্য বাবাসহ পরিবারের লোকজনকে মারধর করে আহত করেছে মাদকাসক্ত ছেলে। সোমবার সকালে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার পশ্চিম লেঞ্জাপাড়া গ্রামে নেশা করার জন্য বাবার কাছে টাকা চায় মাদকাসক্ত ছেলে সুজন মিয়া। তার বাবা মুহিত মিয়া টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সুজন ক্ষিপ্ত হয়ে বাবাকে বেধড়ক মারপিট শুরু করে। এ সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা এতে বাধা দিলে তাদেরকেও মারধর করে মাদকাসক্ত সুজন। খবর পেয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সুজনকে গ্রেপ্তার করে। শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অজয় চন্দ্র দেব বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন- সুজন মাদকাসক্ত। সে প্রায়ই নেশা করার জন্য বাবার কাছে টাকা চায়। টাকা না দেয়ায় বাবাসহ পরিবারের লোকজনকে মারধর করেছে সে। তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

 

মাদকের কুফল

ক। মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি

শেখার ক্ষমতা এবং কাজের দক্ষতা কমিয়ে দেয়। বিচার-বিবেচনা, ভুল ঠিক বোঝার করার ক্ষমতা হারিয়ে যায়, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। আবেগ নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকেনা। উগ্র আচরণের জন্ম দেয়। মানসিক পীড়ন বাড়িয়ে দেয়, আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়। স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হয়।

খ। শারীরিক ক্ষতি

মস্তিষ্ক ও শ্বাসযন্ত্রের ক্ষমতা ও শরীরের সূক্ষ্ম অনুভূতি কমিয়ে দেয় এবং স্মৃতি শক্তি কমিয়ে দেয়। স্বাভাবিক খাদ্য অভ্যাস নষ্ট করে। যৌন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এইডস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। হৃদরোগ সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

গ। অর্থনৈতিক ক্ষতি

পরিবারে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খারচ বেড়ে যায়। কর্মক্ষম জনশক্তি কমে যায়।

ঘ। পারিবারিক অশান্তি

মাদকের কারনে একটি সুখি, সমৃদ্ধ পরিবার অতি দ্রুত ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। পরিবারের অন্য সদস্যরা এমনকি শিশুরাও এতে জড়িয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের পরিবারের সদস্যদেরকে রক্ষা করতে হলেও আমাদেরকে যে কোন প্রকার মাদক থেকে দুরে থাকতে হবে।

DIE বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তিনটি বিষয়ের প্রতি Zero Tolerance নীতি ঘোষণা করেছেসে তিনটির প্রথমটি হলো Drug Abuse ।  অর্থাৎ কোন সেনা সদস্য এই মাদকের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোনভাবে জড়াবে না বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যের এটাই হবে অঙ্গীকার।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ  পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মই অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষা দিয়ে গেছেন। মাদক এমন একটি অন্যায় যা শুধু সেবনকারীকে ধ্বংস করে না পাশাপাশি তার পরিবার সমাজ এমনকি একটি রাষ্ট্রকেও মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলে।

আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃ  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে কোন নেশা উদ্রেককর জিনিস হারাম। আর যে জিনিসের অধিক পরিমাণ নেশা সৃষ্টি করে তার সামান্য পরিমাণও হারাম। [মুসলিম ৩৭৩৩]

রাষ্ট্রীয় আইনে মাদক দ্রব্য গ্রহণ এবং বহনের শাস্তি মাদক সেবন ও বহনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।  সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল, ২০১৮ পাস হয়েছে। এতে ইয়াবা, সিসা, কোকেন, হেরোইন ও পেথিডিন জাতীয় মাদকের ব্যবহার, সেবন, বহন, আমদানি-রফতানি বা বাজারজাত করার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। শনিবার (২৭ অক্টোবর) জাতীয় সংসদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বিলটি প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলটি বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নিষ্পত্তি হয়।

সামরিক আইনে মাদক গ্রহণ এবং বহনের শাস্তিসামরিক আইনে যে কোন ধরনের মাদক দ্রব্য সেবন বা বহনের চাকরিচ্যুত সহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান রয়েছে।

উপসংহারঃ মাদক একটি মহামারী। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে আগামী প্রজন্ম কে রক্ষা করতে চাইলে এখনই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। 

Download Link

No comments

Powered by Blogger.