আদর্শ সৈনিক গঠনে সালাতের ভূমিকা
আদর্শ সৈনিক গঠনে নামাজের ভূমিকা সম্বন্ধে আলোচনা করতে হলে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে আদর্শ সৈনিক কাকে বলে। একজন সুশৃংখল, পরিপাটি, মার্জিত, সত্যবাদী অনুগত, কর্তব্যপরায়ণ, পরিশ্রমী, ধার্মিক ও উন্নত শারীরিক যোগ্যতা ইত্যাদি গুণাবলীর অধিকারী সৈনিককে আদর্শ সৈনিক বলে। একজন সাধারণ সৈনিককে কিভাবে আদর্শ সৈনিক হিসেবে গড়ে তোলা যায়?
এক খণ্ড লৌহ দিয়ে যদি একটি ধারালো অস্ত্র তৈরি করার প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটিকে অত্যধিক তাপে ঝলসিয়ে লাল করে নিয়ে কামার কর্তৃক প্রয়োজন মত নিয়মানুযায়ী হাতুর পেটা করতে হবে। তা না হলে সাধারণ লৌহ খণ্ডকে ধারালো চকচকে অস্ত্রে রূপান্তরিত করা যাবে না। ঠিক এমনিভাবে একজন সাধারণ মানুষকেও আদর্শ সৈনিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কিছু নিয়ম মাফিক কঠোর প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়।
এ প্রসংগে আরেকটি কথা বলা প্রয়োজন যে, প্রতিটি মানুসের দু'টি রূপ আছে। একটি হলো বাহ্যিক রূপ, অপরটি আভ্যন্তরীণ বা অন্তরের রূপ। অন্যদিকে সৈনিক জীবনের অন্যতম প্রয়োজনীয় দিক হলো সামরিক শৃংখলা। সৈনিক জীবন অত্যন্ত কঠিন নিয়ম-শৃংখলারর মধ্য দিয়ে আবর্তিত হয়। নিয়ম-শৃংখলার ব্যাপারে কোনরূপ সমঝোতার অবকাশ এখানে নেই। সৈনিক জীবন ও শৃংখলা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। আমি মনে করি, একজন সৈনিকের সামরিক শৃংখলাও দু'ধরনেরঃ (ক) বাহ্যিক বা প্রকাশ্য
(খ) আভ্যন্তরীণ বা অন্তঃকরণের শৃংখলা।
(খ) আভ্যন্তরীণ বা অন্তঃকরণের শৃংখলা।
এই যে, আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক শৃংখলা-আনুগত্যের কথা বললাম, তা কিভাবে অর্জিত হবে? কঠোর শারীরিক প্রশিক্ষণের সাথে সামরিক বিধি-বিধান লংঘন করার জন্য কঠোর শাস্তির ভয় দেখিয়ে একজনের বাহ্যিক শৃংখলা ও আনুগত্য ঠিক করা যায়। কিন্তু আভ্যন্তরীণ বা মনের শৃংখলা ও আনুগত্য তো এবাবে গড়ে তোলা যায় না। একজন সৈনিক স্যালুট না দিলে তাকে শাস্তি দেয়া যায়। কিন্তু মনে মনে অশ্রদ্ধা করে গালি দিলে তার বিরুদ্ধে কোনরূপ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায় না।
ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় আভ্যন্তরীণ আনুগত্য ও শৃংখলা অর্জন করা যায়। আর তা অর্জনে মাধ্যমে অতিক্ষুদ্র সেনাবাহিনী নিয়েও বিশ্ববিখ্যাত সেনাপতি হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) বহুগুণে শক্তিশালী শত্রুসেনার সাথে যুদ্ধ করে চৌত্রিশটিরও অধিক যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন। জেনারেল তারেক বিন জিয়াদ মাত্র সাতশত সৈনিকের একটি দল নিয়ে ইউরোপের স্পেন জয় করেছিলেন। মুহাম্মদ বিন কাশিম মাত্র কয়েক হাজার সৈন্য নিয়ে জন্য করেছিলেন বিশাল ভারতীয় উপ-মহাদেশ। এ ইতিহাসগুলো তো খুব বেশী দূরের নয়। এ সকল বিশ্ববিখ্যাত বীরদের সৈন্যবাহিনীর মধ্যে যদি আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক শৃংখলা ও আনুগত্যের অসামঞ্জস্যতা থাকতো, তা হলো কখনো এত বড় বড় বিজয় এ ক্ষুদে বাহিনীর দ্বারা সম্ভব হতো না।
ইসলাম ধর্মের মূল স্তম্ভ হলো সালাত (নামাজ)। মুসলমান মাত্রই অত্যন্ত সুশৃংখল জীবন যাপনকারী। শুধু মুখে মুখে আনুগত্য দেখালেই চলবে না। সম্পূর্ণ অন্তর দিয়ে একজন আরেকজনকে শ্রদ্ধা করবে, ঊর্ধ্বতনের আনুগত্য করবে। মুখে ও অন্তরে কোন তফাৎ থাকবে না। সালাতের মাধ্যমে এ ধরণের গুণাবলীর সৃষ্টি করে একজন সৈনিককে আদর্শ সৈনিকে রূপান্তরিত করা যায়। একজন আদর্শ সৈনিকের নিম্ন বর্ণিত গুণাগুণ বিষয়ে সচেতন হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
১)পবিত্রতা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাঃ একজন ভাল সৈনিক সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। নোংরা বা অপরিষ্কার থাকা মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়। সালাতের মাধ্যমে এ গুণটি অর্জিত হয়। যেমন, সালাত আদায় করতে হলে অবশ্যই অজু করে পবিত্র হতে হবে। তা না হলে সালাত আদায় হবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন
يَٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغْسِلُوا۟ وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى ٱلْمَرَافِقِ وَٱمْسَحُوا۟ بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى ٱلْكَعْبَيْنِ ۚ
"হে ঈমানদারগণ, জেনে রাখ যে, যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াবে, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল এবং কনুই পর্যন্ত দু'টি হাত ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেবে, মাথা মাসেহ করবে এবং দু'পা টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেলবে। আর যদি জানাবাতের অবস্থায় থাক, তাহলে খুব ভালো করে পবিত্রা অর্জন করে নেবে।" (সূরা মায়েদাঃ ৬)
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন,
"এবং তোমার পোশাক ভালো করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পাক করে নাও।" (সূরা মুদ্দাস্সিরঃ ৪)
وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ
তাহলে বুঝা গেল যে, যে সৈনিক সালাত আদায় করবে সে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার গুণটি অর্জন করতে পারবে।
২) উত্তম চরিত্রঃ একজন সৈনিকের মন-মানসিকতা, আচার ব্যবহার, কথাবার্তা, চাল-চলন, অংগ-ভঙ্গি ইত্যাদি যখন সাবলীল হয়, মুখে কোন অশ্লীল কথা সে বলে না, সকলের সাথে ভদ্র আচরণ করে, যে কোন খারাপ কাজ-কর্ম তেকে নিজেকে বিরত রাখে, তখন আমরা তাকে উত্তম চরিত্রবান সৈনিক বলি। সালাত দিয়ে প্রত্যেকের ভিতরে এসকল উন্নত আদর্শিক গুণাবলি সৃষ্টি করে আদর্শ সৈনিকে রূপান্তরিত করা যায়। সালাতই যে তা পারে সে সাক্ষ্য আল্লাহ নিজে দিচ্ছেন,
إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنْهَىٰ عَنِ ٱلْفَحْشَآءِ وَٱلْمُنكَرِ
"নিঃসন্দেহে সালাত অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর সালাত হলো আল্লাহর নিকট সর্বোৎকৃষ্ট জিকির।" (সুরা আনকাবুতঃ ৪৫) ৩) সময় সচেতনতাঃ সালাত আদায় কারী ব্যক্তি প্রতিদিন ভোরে ফজরের আজানের সাথে সাথে ঘুম থেকে জেগে উঠে পবিত্র হয়ে আল্লাহর ইবাদাতে লিপ্ত হয়। এর পর শুরু হয় তার কর্মময় দিন। পিটি প্যারেডে সময়মত হাজির হতে তার মোটেও বেগ পেতে হয় না। ভোরে বিচানা থেকে উঠা তার অভ্যাসে পরিণত হয়। একজন আদর্শ সৈনিক হয় সময়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধসম্পন্ন। সালাত আদায় কারী সৈনিকের মাঝে এই গুণটি সহজেই জেগে উঠে। কেননা, ঠিক সময়ে তাকে সালাত আদায় করতে হবে। সে জন্যে সালাত সময় নিষ্ঠার সাথে ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন
فَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ ۚ إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتْ عَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ كِتَبًۭا مَّوْقُوتًۭا
"অতএব সালাত কায়েম কর, বস্তুত সালাত মুমিনের উপর সময় নিষ্ঠার সাথে ফরজ করা হয়েছে।"(সূরা নিসাঃ ১০৩)৪) নিষ্ঠাঃ আদর্শ সৈনিক হয় অত্যন্ত নিষ্ঠাবান। সালাতের মাধ্যমে এ গুণটি অর্জিত হয়। অর্থাৎ কোন সালাত নষ্ট না ক্রমাগত সর্বদা সালাত আদায় করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে সালাত আদায় কারী তাদেরকে বলা যেতে পারে যারা সময়নিষ্ঠা এবং কোন সালাত বাদ না দিয়ে আদায় করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন
إِلَّا ٱلْمُصَلِّينَ
ٱلَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَاتِهِمْ دَآئِمُونَ
"কিন্তু ঐ সব সালাত আদায় কারী যারা সময়নিষ্ঠার সাথে সর্বদা সালাত আদায় করেছে।" (সূরা মাআরিজঃ ২২-২৩)৫) প্যারেডের শৃংখলাঃ সালাত আদায় কারী কাতার বন্দী হয়ে, সালাতের কাতার সোজা রেখে অত্যন্ত সুশৃংখলভাবে সালাত আদায়ের উদ্যেশ্যে দাঁড়ায়। ঠিক একইভাবে প্রতিটি ভালো সৈনিকও লাইন ঠিক রেখে সোজা ও সুশৃংখলভাবে যে কোন প্যারেডে দাঁড়ায়। সুতরাং সালাত আদায় কারী সৈনিক এ কাজটি সহজেই করতে পারে। কেননা প্রতিদিন পাঁচবার সালাতের মাধ্যমে তাকে এ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। নবী কারীম (সাঃ) বলেন
عَنِ ابْنِ عُمَرَ اَنّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَى الله عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ أَقِيْمُوا الصُّفُوْفَ وَ حَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَ سُدُّوْا الْخَلَلَ وَ لِيْنُوْا بِأَيْدِيْ اِخْوَانِكُمْ وَ لَاتَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشّيْطَانِ وَ مَنْ وَصَلَ صَفّا وَصَلَهُ اللهُ وَ مَنْ قَطَعَ صَفّا قَطَعَهُ اللهُ
عَنِ ابْنِ عُمَرَ اَنّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَى الله عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ أَقِيْمُوا الصُّفُوْفَ وَ حَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَ سُدُّوْا الْخَلَلَ وَ لِيْنُوْا بِأَيْدِيْ اِخْوَانِكُمْ وَ لَاتَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشّيْطَانِ وَ مَنْ وَصَلَ صَفّا وَصَلَهُ اللهُ وَ مَنْ قَطَعَ صَفّا قَطَعَهُ اللهُ
ইবনু উমার রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কাতার সোজা কর। কাঁধসমূহকে বরাবর রাখ। ফাঁক বন্ধ কর। তোমাদের ভাইদের হাতে তোমরা নরম হয়ে যাও এবং শয়তানের জন্য ফাঁক ছেড়ে দিয়ো না। যে কাতার জুড়ে দেয় আল্লাহ তাআলাও তাকে জুড়ে দেন। পক্ষান্তরে যে কাতার বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ তাআলা তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। -সুনানে আবূ দাঊদ,
৬) মনের প্রশান্তিঃ মনের প্রশান্তি ব্যতীত কেহই ভালোভাবে কর্মক্ষেত্রে মনোনিবেশ করতে পারে না। একজন আদর্শ সৈনিকের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। সালাত আদায় কারীর শরীর ও মন পবিত্র থাকে বলে সব সময় তার মনে প্রশান্তি বিরাজ করে। সালাত হচ্ছে আল্লাহর সর্বোৎকৃষ্ট ইবাদাত। ইবাদাতের মাধ্যমে মনের প্রশান্তি লাভ করার মধ্য দিয়ে যে কোন সৈনিক আদর্শ সৈনিকে পরিণত হয়।
৭) জামায়াতে সালাতের ব্যবস্থাপনাঃ সৈনিকদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি কাজই সংঘবদ্ধভাবে করতে হয়। সকালে শরীর চর্চা, ড্রিল, অধিনায়কের কুচকাওয়াজ ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ সকল কিছুই সকলে একত্রিত ভাবে করতে হয়। কোন সৈনিক সময়মত অধিনায়কের কুচকাওয়াজে উপস্থিত না হয়ে তা শেষ হবার পর একাকী যদি সারাদিনও লেফট্্ রাইট করে ড্রিল করে বেড়ায়, তাহলেও সে অধিনায়কের কুচকাওয়াজে অনুপস্থিত থাকার শর্ত আদায় করতে পারবে না এবং শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না। ঠিক একই ভাবে আল্লাহ তা'আলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামায়াতবদ্ধ ভাবে আদায় করার জন্য নির্দেশ দিয়ে বলেন,
وَٱرْكَعُوا۟ مَعَ ٱلرَّكِعِينَ
"তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।"- (সূরা বাকারাঃ ৪৩)নবী (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্ত আযান শোনার পর জামায়াতে সালাত আদায় করতে আসে না এবং তার না আসার কোন কারণ ও নেই, তাহলে তার সে সালাত কবুল হবে না, যা সে একাকী আদায় করে।-( আবু দাউদ)
সুতরাং, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামায়াতে আদায় করার মাধ্যমে একজন সৈনিক তার কর্মময় জীবনের বিভিন্ন ফল ইন (Fall-in) এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে সমর্থ হয়।
৮) আগ্রহ ও মনোবল বৃদ্ধিঃ প্রতিটি আদর্শ সৈনিক তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য আগ্রহ ও মনোযোগ দিয়ে পালন করতে সচেষ্ট থাকেন। সালাতের মাধ্যমে একজন মানুষের আগ্রহ ও মনোযোগ গুণটি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। কেননা প্রকৃত সালাত হলো- দেহ, মন-মস্তিষ্ক, আবেগ- অনুভূতি এবং চিন্তা ভাবনার সাথে একনিষ্ঠ হয়ে মহান আল্লাহর দিকে মনোযোগ দেয়া।
৯) শিষ্টাচার ও আত্মসমর্পণঃ আদর্শ সৈনিকের অন্যতম গুণ হলো যে, সে খুব শিষ্টাচারী ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সদা নিবেদিত প্রাণ। যুদ্ধের ময়দানে তার উপরস্থ কর্মকর্তার আদেশের প্রতি থাকে প্রচণ্ড শ্রদ্ধাবোধ। সালাত আদায় কারী সৈনিকের মধ্যে এ গুণটি সহজেই সঞ্চারিত হয়। আল্লাহ বলেন,
حَفِظُوا۟ عَلَى ٱلصَّلَوَتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلْوُسْطَىٰ وَقُومُوا۟ لِلَّهِ قَنِتِينَ
"সালাতের রক্ষণাবেক্ষণ কর, বিশেষ করে সর্বোৎকৃষ্ট সালাতের এবং আল্লাহর সামনে শিষ্টাচার ও আত্মসমর্পনের মূর্ত-প্রতীক হয়ে দাঁড়াও।" (সূরা বাকারাঃ ২৩৮)
আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন
وَبَشِّرِ ٱلْمُخْبِتِينَ
ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَٱلصَّبِرِينَ عَلَىٰ مَآ أَصَابَهُمْ وَٱلْمُقِيمِى ٱلصَّلَوٰةِ وَمِمَّا رَزَقْنَهُمْ يُنفِقُونَ
حَفِظُوا۟ عَلَى ٱلصَّلَوَتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلْوُسْطَىٰ وَقُومُوا۟ لِلَّهِ قَنِتِينَ
"সালাতের রক্ষণাবেক্ষণ কর, বিশেষ করে সর্বোৎকৃষ্ট সালাতের এবং আল্লাহর সামনে শিষ্টাচার ও আত্মসমর্পনের মূর্ত-প্রতীক হয়ে দাঁড়াও।" (সূরা বাকারাঃ ২৩৮)
আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন
وَبَشِّرِ ٱلْمُخْبِتِينَ
ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَٱلصَّبِرِينَ عَلَىٰ مَآ أَصَابَهُمْ وَٱلْمُقِيمِى ٱلصَّلَوٰةِ وَمِمَّا رَزَقْنَهُمْ يُنفِقُونَ
"এবং (হে নবী) সুসংবাদ দিন ঐ সব লোকদেরকে যারা বিনয় ও শিষ্টাচার অবলম্বন করে এবং যাদের অবস্থা এই যে, যখন তারা আল্লাহর যিকির শুনে, তাদের অন্তর কেঁপে উঠে, বিপদ আপদে অটল অবিচল হয়ে বরদাশত করে এবং সালাত কায়েম করে।"- (সূরা হজ্জ্বঃ৩৪-৩৫)
আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন
وَٱذْكُر رَّبَّكَ فِى نَفْسِكَ تَضَرُّعًۭا وَخِيفَةًۭ وَدُونَ ٱلْجَهْرِ مِنَ ٱلْقَوْلِ بِٱلْغُدُوِّ وَٱلْءَاصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ ٱلْغَفِلِينَ
আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন
وَٱذْكُر رَّبَّكَ فِى نَفْسِكَ تَضَرُّعًۭا وَخِيفَةًۭ وَدُونَ ٱلْجَهْرِ مِنَ ٱلْقَوْلِ بِٱلْغُدُوِّ وَٱلْءَاصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ ٱلْغَفِلِينَ
"এবং আপনার রবকে সকাল সন্ধ্যায় স্মরণ করুন, মনে বিনয় অবস্থায়, তাঁর ভয়ে এবং অনুচ্চস্বরে এবং গাফেলদের মধ্যে শামিল যেন না হন।"-(সূরা আ'রাফঃ ২০৫)
১০) বিনয় ও নম্রতাঃ সৈনিক জীবনের প্রধান গুণ হলো যে, একজন আদর্শ সৈনিক হবে বিনয়ী ও নম্র। কথাবার্তা, ব্যবহার, আচার আচরণে সকলে তার নিয় ও নম্রতা দেখে মুগ্ধ হবে। এ বিনয় ও নম্রতা গুণটি সালাতের মাধ্যমে অর্জন করা যায়। কেননা, বিনয় ও নম্রতা হলো সালাতের প্রাণ। একজন মুমিন বান্দা সালাতের মাধ্যমে তার সকল মন্দ আবেগ-অনুভূতিকে জলাঞ্জলী দিয়ে অত্যন্ত বিনয় ও নম্রতা সাথে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হন। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
قَدْ أَفْلَحَ ٱلْمُؤْمِنُونَ
ٱلَّذِينَ هُمْ فِى صَلَاتِهِمْ خَشِعُونَ
"ঐ সব মুমিন কল্যাণ লাভ করেছে, যারা তাদের সালাতে বিনয়ী ও নম্র।"- (সূরা আল মুমিনুনঃ ১-২)
১১) আনুগত্যপরায়ণতাঃ সালাত আদায় কারী ব্যক্তি জামায়াতে সালাত আদায় করার মাধ্যমে সকল সময় ইমামের আদেশ নির্দেশ অনুসারে সালাত আদায় করে থাকেন। মহান সত্তা ও প্রভূ আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য দেখানোর জন্য ইমামের সঠিক নির্দেশ শোনা একান্ত অপরিহার্য। এভাবে যদি কোন সৈনিক নিয়মিত সালাত আদায় করেন, তাহলে তার ভিতরেও তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঠিক নির্দেশের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ধীরে ধীরে বেড়ে যায়।
১২) নিরহংকারঃ অহংকার বা গর্ব মানুষকে ধ্বংস করে। মানুষ মাত্রই আল্লাহর গোলাম। আল্লাহর গোলামের নিজস্ব এমন কিছু নেই, যার দ্বারা সে গর্ব অহংকার করতে পারে। একজন আদর্শ সৈনিকও নিরহংকারী হবে। সে দম্ভ করবে না, গর্ব করে না, অন্যের তুলনায় নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবে না। এ গুণটি অর্জিত হয় সালাতের মাধ্যমে। সালাত আদায় কারী ব্যক্তিগণ সব সময় একমাত্র আল্লাহকে সকল ক্ষমতার উৎস হিসেবে বিশ্বাস করেন। তাই তাদের মনের মধ্যে অহংকার বা গর্ব আসে না। সৈনিকরা সালাতের মাধ্যমে এ বিশেষ গুণটি অর্জন করতে পারেন সহজেই।
আল্লাহ তা'আলা এ প্রসঙ্গে বলেন,
إِنَّمَا يُؤْمِنُ بِـَٔايَتِنَا ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا۟ بِهَا خَرُّوا۟ سُجَّدًۭا وَسَبَّحُوا۟ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ
"আমার আয়াতের উপরে তো প্রকৃতপক্ষে তারাই ঈমান আনে, যাদের এসব আয়াতের দ্বারা আমার স্মরণ করিয়ে দিলে সিজদায় পড়ে যায় এবং নিজেদের প্রভূর প্রশংসা ও পবিত্রতা বয়ান করতে থাকে এবং তারা গর্ব অহংকার করে না।"(সূরা আস-সিজদাহঃ ১৫)১৩) মৃত্যুকে ভয় না করে শহীদ হওয়ার আকাংখাঃ যে সৈনিকের মৃত্যুভয় থাকে, সে কখনো আদর্শ সৈনিক হতে পারে না। মাতৃভূমির স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সৈনিক হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে। "মরলে শহীদ, বাচঁলে গাজী।" এ বিশ্বাসে অটল থাকে সে। সালাতের মাধ্যমে এ বিশ্বাস আরো তীব্রতর হয়। কেননা নিয়মিত সালাত আদায় কারী ব্যক্তি বিশ্বাস করে, আল্লাহ নির্ধারিত সময়ের পূর্বে মরণ নেই। আর সে সময় যখন এসে যাবে, মৃত্যুর হাত থেকে বাচাঁর কোন পন্থাই নেই। সুতরাং মৃত্যুকে ভয় কারারও কোন কারণ নেই। সালাত আদায় কারী ব্যক্তি বিশ্বাস করে, মাতৃভূমির জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়ার মৃত্যু হল সম্মানের মৃত্যু। শহীদের জন্য বেহেস্তের দরজা খোলা।
কবির ভাষায়
"শহীদি মৃত্যু নহেকো মৃত্যু,
নব জীবনের অভ্যুদয়,
শহীদের তাজা খুনে আখেরাতে,
নব ইতিহাস লেখা হয়।"
নব জীবনের অভ্যুদয়,
শহীদের তাজা খুনে আখেরাতে,
নব ইতিহাস লেখা হয়।"
যে সৈনিক পূর্ণ আস্থার সাথে সালাত আদায় করে, সে হয় নির্ভীক ও মরণজয়ী। দেশ ও জাতি হয় তার দ্বারা উপকৃত। আল্লাহ বলেন,
إِنَّ ٱللَّهَ ٱشْتَرَىٰ مِنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ ٱلْجَنَّةَ
"নিশ্চয় আমি মুমেনের জান-মাল জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করেছি।" (তাওবাঃ ১১১)
১৪) ন্যায়পরায়ণতাঃ শোষক, জালেমের জুলুম, অন্যায়, অবিচার কখনো আদর্শ সৈনিকগণ মেনে নেয় না। জীবনের সবকিছু দিয়ে এর প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে সৈনিক বদ্ধপরিকর। সালাতের মধ্য দিয়ে এ গুণটি অর্জিত হয়।
১৫) পরোপকারীঃ সৈনিক শুধু যুদ্ধের ময়দানেই থাকে না, যুদ্ধ কিংবা শান্তিকালীন সময়ে যে গরীব, দুঃখী, অনাথ, অসহায়, ক্ষতিগ্রস্ত মানুসের উপকার করে, সেবা করে নিঃস্বার্থভাবে ঝড়-ঝঞ্ঝা, সাইক্লোন, প্লাবনে সে ছুটে যায় আর্ত-মানবতার সেবায়। শান্তির ধর্ম ইসলামের এটিই হলো মুল শিক্ষা। সালাত আদায় কারী সৈনিকের মধ্যে পরোপকারী মনোভাব খুব বেশি থাকে।
১৬) সত্যবাদীতাঃ যে কোন সৈনিকের অন্যতম গুণ হচ্ছে সদা সত্য কথা বলা, মিথ্যাকে পরিহার করা। সত্য কথা বললে মনের সাহস থাকে পরিপুর্ণ। মিথ্যা বলা মহাপাপ, কবিরা গুনাহ। কোন সালাত আদায় কারী সৈনিক মিথ্যার আশ্রয় নিতে দ্বিধা করবে এবং এক পর্যায়ে তা পরিহার করবে। কেননা, যে মুখ দিয়ে সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়, সে মুখ দিয়ে মিথ্যা বলার কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সালাত আদায় কারী ব্যক্তি ওয়াকিফহাল। তাই সালাত সৈনিককে সত্যবাদী হওয়ার শিক্ষা দেয়।
১৭) ধৈর্যশীলতাঃ প্রতিটি মানুসের জীবনের সকল গুণাবলীর মধ্যে ধৈর্যশীলতা হলো সবচেয়ে বড় গুণ। সৈনিক জীবনে এ গুণটির গুরুত্ব আরো অনেক গুণে বেশী। দুনিয়ার জীবন সংগ্রামে প্রত্যেককে সুখ-দুঃখ, অভাব-অভিযোগ, ন্যায়-অন্যায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে সমাজ সংসার অতিবাহিত করতে হয়। এ জীবন সংগ্রামে ধৈর্যহারা হওয়া চলবে না। সংগ্রাম মুখর জীবন অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে অতিক্রম করতে হবে। আল্লাহ বলেন-
يَٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱسْتَعِينُوا۟ بِٱلصَّبْرِ وَٱلصَّلَوٰةِ
"ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা আল্লাহর সাহায্য কামনা কর।"- (বাকারাঃ ১৫৩)
সালাত আদায় কারী সৈনিকের মধ্যে ধৈর্যশীলতা ক্রমেই বেড়ে যায় এবং এভাবে সে আদর্শ সৈনিকে পরিণত হয়।
১৮) ভ্রাতৃত্ববোধঃ সৈনিক জীবন হলো এক চ্যালেঞ্জের জীবন। নিজের পরম আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন প্রকৃতির নওজোয়ানদের নিয়ে সেনাবাহিনী গঠিত। সকলকে একসাথে সেনা ব্যারাকে জীবন যাপন করতে হয়। প্রত্যেককে উঠা-বসা, খানা-পিনা, প্রশিক্ষণ, মহড়া, যুদ্ধ সব কিছুই একই সাথে করতে হয়। তাই পরস্পরের মধ্যে আত্মার সম্পর্ক, গভীর ভ্রাতৃত্ববোধ একান্ত অপরিহার্য। প্রত্যেককে নিজের চেয়ে অন্যের অধিকারের প্রতি গুরুত্ব দেয়া কর্তব্য। ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে প্রত্যেককে আবদ্ধ হতে হবে। জাগ্রত করতে হবে গভীর মমত্ববোধ। সালাতের মাধ্যমে এ গুণটির জীবনী শক্তি সঞ্চারিত হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন
مُّحَمَّدٌۭ رَّسُولُ ٱللَّهِ ۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ
"তারা পরস্পরের প্রতি দয়াশীল।" (আল কুরআন)"রাসুল (সাঃ) বলেন একের প্রতি অপরের দয়া, মহাব্বত ও আকর্ষণে মুসলমানকে একটি মানব দেহের মত দেখা যাবে। শরীরের কোন একটি অঙ্গে রোগের আক্রমণ হলে যেমন পূর্ণ শরীরে অনিদ্রা ও জ্বর দেখা দেয়, তেমনি মুসলমানদের একজন বিপদগ্রস্থ হলে সকল মুসলমানই ব্যথা অনুভব করবে।"- (বুখারী ও মুসলিম)
সালাত আদায় কারী মুসলমানদের মধ্যে তীব্র ভ্রাতৃত্ববোধ গুণটি দিয়েই ইসলামের গৌরবময় যুগের সূচনা হয়েছিল। দেশের পর দেশ, জাতির পর জাতিকে পদানত করেছে মুসলমানগণ এ ভ্রাতৃত্ববোধের কারণে। যুদ্ধের ময়দানে অসংখ্য মুসলমান আহত অবস্থায় তীব্র পিপাসার মধ্যেও সামান্য পানি নিজে পান না করে অপর ভাইকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এভাবে একে একে নিঃস্বার্থভাবে অপরের কষ্টকে গুরুত্ব দিয়ে সকলে শাহাদাতের পেয়ালার স্বাধ গ্রহণ করেছে। এ হল সালাত আদায় কারী মুসলমানদের ভ্রাতৃত্ববোধের ইতিহাস।
১৯) তীব্র ঈমানী শক্তিঃ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, মুসলমানগণ সকল যুদ্ধে শত্রু বাহিনীর চেয়ে সংখ্যায় ও শক্তিতে অনেক কমজোর হয়েও বিজয় লাভ করেছে। কিসের বদৌলতে তা সম্ভব হয়েছে? একমাত্র ঈমানী শক্তির বলে তা অর্জিত হয়েছে।
সালাত আদায়ের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে তীব্র ঈমানী শক্তি সঞ্চারিত হয়। মুসলমানগণ একমাত্র মহান শক্তিশালী আল্লাহর সাহায্য কামনা করে। আল্লাহ তা’আলা তাঁর খাঁটি বান্দাদের যুদ্ধের ময়দানে ফেরেস্তা পাঠিয়ে সাহায্য করেন, তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে। আল্লাহর সাহায্য পেলে কোন অবস্থাতেই যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাদশাহ আওরঙ্গজেবকে যুদ্ধের ময়দানে সালাতরত দেখে তার শত্রু বাহিনী ভয়ে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়েছে। আমাদের সৈনিকগণও যদি নিয়মিত সালাত আদায় কারী হয় তাহলে তাদের মধ্যে ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি পাবে ইনশা আল্লাহ।
২০) শারীরিক যোগ্যতা বৃদ্ধিঃ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্তে কমপক্ষে বত্রিশ রাকাত সালাতের মাধ্যমে যে শারীরিক কসরত হয়, এতে শরীর সব সময় সুস্থ থাকে। সালাত আদায় কারী ব্যক্তি একাগ্রচিত্তে, ধ্যান সহকারে সোজা হয়ে সালাতে দাঁড়ায়, রুকু করে, সেজদায় যায়, এতে শরীরের প্রতিটি অংগ প্রত্যংগ সঞ্চালিত হয়। তাই সালাত আদায় কারী সৈনিক যুদ্ধকালীন সময়ে শরীর চর্চা না করলেও সালাতের মাধ্যমে শারীরিক যোগ্যতা বজায় রাখতে সক্ষম। সুতরাং সালাতের মাধ্যমে সৈনিক তার শরীরকে গঠন করার সুযোগ পায় এবং আদর্শ সৈনিক হওয়ার গুণটি অর্জন করে।
২১) বিশ্বস্ততাঃ সালাত আদায় কারী সৈনিক অর্পিত দায়িত্বকে ইবাদাত মনে করে অতি বিশ^স্ততার সাথে সেগুলো সম্পাদন করার চেষ্টা করে। কেননা, সে মনে করে,কাজের নিয়ত যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়, তাহলে তা ইবাদাত বলে গণ্য হবে। তাই সে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কোন ধরণের ফাঁকি দিতে চেষ্টা করে না। সর্বদা মনে মনে ভাবতে চেষ্টা থাকে যে, আল্লাহ তা'আলা তার কাজকে দেখছেন।
উপসংহারঃ আমাদের সেনাবাহিনী দেশ মাতৃকার সাহসী সন্তানদের নিয়ে গঠিত। মাতৃভূমির সার্বভৈৗমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী এ সেনাবাহিনী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অত্যন্ত সুনাম ও খ্যাতির সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আদর্শগত গুণ যদি আরো বৃদ্ধি করা যায়, তাহলে ইনশা আল্লাহ আবশ্যই আমাদের সেনাবাহিনী হবে বিশ্বের অন্যতম একটি সুশৃংখল আদর্শ বাহিনী এবং সালাতের মাধ্যমে এ কাজটি অতি সহজেই করা যায়। ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি উভয়ই সালাতের মধ্যে নিহিত রয়েছে।
সালাত হলো আল্লাহ প্রদত্ত সর্বোৎকৃষ্ট ইবাদাত। কাঁচা লোহাকে যেমন পুড়িয়ে লাল করে কামারের হাতুড়ীর আঘাতে অস্ত্রে পরিণত করা যায়, ঠিক তেমনি একজন সাধারণ মানুষকেও সালাতের মাধ্যমে অতি উন্নত, মহান ও আদর্শ ব্যক্তিতে পরিণত করা যায়। আল্লাহ সালাতকে খুব পছন্দ করেন। তিনি বলেন,
إِنَّنِىٓ أَنَا ٱللَّهُ لَآ إِلَهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعْبُدْنِى وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِذِكْرِىٓ
"নিশ্চয় আমি আল্লাহ,আমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। অতএব শুধু আমারই ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণের জন্য সালাত প্রতিষ্ঠা কর।"- (সূরা ত্বাহাঃ ১৪)
"রসুল (সাঃ) একবার সাহাবীদের জিজ্ঞেস করলেন, যদি তোমাদের মধ্যে কারো ঘরের পাশ দিয়ে কোন নদী প্রবাহিত হয়। যার মধ্যে সে দৈনিক পাঁচ বার গোছল করে, তাহলে বল, তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? সাহাবীগণ (রাঃ) বললেন, না তার শরীরে কোন ময়লাই থাকবে না। নবী (সাঃ) বললেন, এ অবস্থা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় কারীর। আল্লাহ তা’আলা এসব সালাতের বদৌলতে তার গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন।" (বুখারী ও মুসলিম)
সুতরাং সালাত এমন এক ইবাদাত, যার মাধ্যমে আমাদের মনের যাবতীয় পাপ-পংকলতা দূরীভূত করে অতি মহৎ, সুন্দর ও আদর্শ জীবন যাপনে আমরা অভ্যস্ত হই এবং এ ভাবে যদি আমরা আমাদের সৈনিকদেরকে সালাতের জন্য অনুপ্রাণিত করি, তাহলে অতি সহজেই সকল সৈনিক আদর্শ সৈনিকে পরিণত হবে। সেনাবাহিনী হবে উজ্জ্বল ভাব-মূর্তির অধিকারী। এতে দেশ ও জাতি হবে গৌরবান্বিত, মহিমান্বিত।
এই ক্লাসটি পিডিএফ ডাউনলোড করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
No comments