সূরা ইয়াসীন এর তাফসীর
ইয়াসীন।
(এর অর্থ একমাত্র আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন) শপথ প্রজ্ঞাময় কুরআনের। নিশ্চয় আপনি রাসূলগণের মধ্য হতে (একজন রাসূল)। (আপনি) সরল পথে আছেন। এই কুরআন মহা পরাক্রমশালী ও অতি দয়াময়ের পক্ষ হতে অবতারিত। যেন আপনি এমন সম্প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শন করেন যাদের পিতা-পিতামহদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয় নাই। তাই তারা গাফেল রয়েছে। সূরা ইয়াসীন : ১-৬
(এর অর্থ একমাত্র আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন) শপথ প্রজ্ঞাময় কুরআনের। নিশ্চয় আপনি রাসূলগণের মধ্য হতে (একজন রাসূল)। (আপনি) সরল পথে আছেন। এই কুরআন মহা পরাক্রমশালী ও অতি দয়াময়ের পক্ষ হতে অবতারিত। যেন আপনি এমন সম্প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শন করেন যাদের পিতা-পিতামহদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয় নাই। তাই তারা গাফেল রয়েছে। সূরা ইয়াসীন : ১-৬
তাফসীর
সূরা ইয়াসীনের ফযীলত
সূরা ইয়াসীনের বহুবিদ ফযীলত বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত রয়েছে। যেমন-
এক. হযরত আনাস রাযি. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إن لكل شيء قلباوقلب القرآن يٰس
প্রত্যেক বস্তুর একটি ক্বলব বা দিল রয়েছে। কুরআনের ক্বলব বা দিল হচ্ছে সূরা ইয়াসীন। তিরমিযী
দুই. হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ان الله تبارك وتعالىقرأ طه ويس قبلان يخلق السماوات والارضبالف عام فلما سمعتالملائكة القرآن قالت طوبىلامة ينزل هذا عليهاوطوبى لاجواف تحمل هذاوطوبى لالسنة تـتكلم بهذا
আল্লাহ তাআলা আসমান যমীন সৃষ্টির এক হাজার বছর পূর্বে সূরা ত্বহা ও সূরা ইয়াসীন পাঠ করেছেন। ফেরেশতারা উক্ত সূরাদ্বয়ের তিলাওয়াত শুনে বলেছিল, ধন্য ও সৌভাগ্যবান ঐ উম্মত যাদের উপর এ কুরআন নাযিল হবে। ধন্য ঐ সব ক্বলব বা দিল যেসব ক্বলব এটি বহন করবে। ধন্য ঐ সব যবান যেসব যবান এটি পাঠ করবে। দারেমী
তিন. আতা ইবনে আবি রাবাহ (মুরসাল স্বরূপ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
من قرأ يس فيصدر النهار قضيت حوائجه
যে ব্যক্তি দিবসের শুরতে সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে তার সমস্ত হাজত ও প্রয়োজন মোচন করে দেওয়া হবে। দারেমী
চার. মাকেল ইবনে ইয়াসার রাযি. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
من قرأ يس ابتغاءوجه الله عز وجلغفر له ما تقدممن ذنبه فاقرءوها عندموتاكم
যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। অতএব তোমরা তোমাদের মৃতদের কাছে সূরা ইয়াসীন পাঠ কর। শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী
হাদীসে উল্লিখিত ‘মৃতদের’ বলতে যারা মরণাপন্ন তারাও উদ্দেশ্য হতে পারে আবার যারা মারা গেছে তারাও উদ্দেশ্য হতে পারে।
পাঁচ. হযরত আবূ যর রাযি. হতে বর্ণিত, যে মুমূর্ষ ব্যক্তির কাছে সূরা ইয়াসীন পাঠ করা হবে তার মৃত্যু সহজ হবে। দারাকুতনী
یٰسٓ : ইয়াসীন
কুরআনে কারীমে সূরার শুরুতে যে বিচ্ছিন্ন হরফসমূহ উল্লেখ থাকে যেগুলোর অর্থ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না یٰسٓ অনুরূপ একটি শব্দ। হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. হতেও অনুরূপ উক্তি রয়েছে।
ইমাম মালেক রহ. হতে বর্ণিত, یٰسٓ আল্লাহর নামসমূহের মধ্য হতে একটি নাম।
ইবনে জুবাইর রাযি. হতে বর্ণিত, ইয়াসীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি নাম।
یٰسٓ ইয়াসীন শব্দ দ্বারা কারো নাম রাখা যাবে কি না?
ইমাম মালেক রহ. এর মতে ইয়াসীন শব্দ দ্বারা কারো নাম রাখা পছন্দনীয় নয়। কেননা তাঁর মতে এটি আল্লাহর নামসমূহের অন্তুর্ভুক্ত। এ শব্দের সঠিক অর্থ জানা নাই। হতে পারে এর এমন কোন অর্থ হবে যা আল্লাহর সত্তার জন্যই প্রযোজ্য।
তবে এ শব্দটি যদিيَاسِيْن রূপে অর্থাৎ يَاءকে ভিন্ন করে লেখা হয় তবে অবশ্য কারো নাম রাখা যেতে পারে। কেননা, কুরআনে কারীমে اِلْيَاسِيْنএর স্থলে অপর এক কেরাত অনুযায়ী اٰلِ يَاسِيْن রয়েছে।
اِنَّکَلَمِنَ الْمُرْسَلِیْنَ تَنْزِیْلَ الْعَزِیْزِ الرَّحِیْمِ
কাফেররা বলত, لَسْتَ مُرْسَلاً আপনি রাসূল নন। এমনিভাবে তারা বলত, بَلِافْتَرَاهُ কুরআন আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয় নাই; বরং মুহাম্মদ এটা নিজে রচনা করেছে। উক্ত আয়াতে তাদের এসব মিথ্যা অপবাদ খণ্ডন করেছেন যে, আপনি অবশ্যই রাসূল এবং এ কুরআন আল্লাহর পক্ষ হতেই অবতীর্ণ হয়েছে।
لِتُنْذِرَقَوْمًا مَّاۤ اُنْذِرَ اٰبَآؤُهُمْفَهُمْ غٰفِلُوْنَ
উক্ত আয়াতে اٰبَآؤُهُمْ ‘পিতা-পিতামহ’দ্বারা নিকটতম আরবরা উদ্দেশ্য। নচেৎ হযরত ইবরাহীম আ. আরবদের মধ্যেই প্রেরিত হয়েছিলেন। এরপর দীর্ঘকাল পর্যন্ত কোন নবী রাসূলের আগমন ঘটে নাই। অবশ্য দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ ভিন্ন আন্দাজে চালু ছিল। কিন্তু নবী-রাসূলের দাওয়াত এবং তাদের ভীতি প্রদর্শনের প্রভাব-প্রতিক্রিয়া ভিন্নরূপ। যার ফলে আরবরা গাফেল ছিল, দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল। তাই তাদেরকে সজাগ করার উদ্দেশ্যে এবং ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে আরবের সুপ্রসিদ্ধ ও সুখ্যাত কুরাইশ বংশ থেকে মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাদের মাঝে অনন্য মহাপ্রজ্ঞাময় আসমানী গ্রন্থ কুরআনে হাকীম দিয়ে প্রেরণ করেন।
আফসোসের বিষয়! যে কুরআনে হাকীমের পরশে যুগ যুগ ধরে জাহেলিয়াত ও মূর্খতার গহŸরে নিপতিত আরবরা হীরা বনে গেল এবং জাহেলী যুগ সোনালী যুগে পরিণত হয়ে গেল আজ আমরা কুরআন থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে যেন সেই জাহেলী যুগে চলে গেছি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এহেন অধঃপতন থেকে রক্ষা করুন।
No comments